অভ্যন্তরীণ আয় বাড়ানোর উদ্যোগ হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা এবার বাজেট পরবর্তী সময়ে বাড়িয়েছে সরকার—যা দেশের ইতিহাসে প্রথম ঘটনা।
২০২৫-২৬ অর্থবছরে এনবিআরকে শুরুতে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছিল। তবে বাজেটের পাঁচ মাস না যেতেই তা ৫৪ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে নতুন লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৫৪ হাজার কোটি টাকা। গত ২০ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় মাসভিত্তিক লক্ষ্য ও বিস্তারিত পরিকল্পনা পাঠাতে এনবিআরকে নির্দেশ দিয়েছে।
অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই–অক্টোবর) এনবিআর রাজস্ব সংগ্রহ করেছে ১ লাখ ১৯ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা, যেখানে লক্ষ্য ছিল ১ লাখ ৩৬ হাজার ৬৯৭ কোটি টাকার বেশি। ফলে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা। যদিও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ; তবে এক যুগের বেশি সময় ধরে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা আগের মতোই রয়ে গেছে।
গত অর্থবছরেও লক্ষ্যমাত্রা কমানোর পর তা পূরণ করতে পারেনি এনবিআর। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা, কিন্তু আদায় হয় মাত্র ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি, অর্থাৎ ঘাটতি প্রায় ৯২ হাজার কোটি টাকা।
অবশিষ্ট ৮ মাসে নতুন লক্ষ্য অর্জনে এনবিআরকে এখন আদায় করতে হবে ৪ লাখ ৩৪ হাজার ৫২২ কোটি টাকা। পূর্বে একই সময়ের লক্ষ্য ছিল ৩ লাখ ৬২ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। এ কারণেই গবেষণা ও পরিসংখ্যান অনুবিভাগ এনবিআরের অধীন সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো থেকে খাতভিত্তিক পরিকল্পনা চেয়েছে।
নতুন লক্ষ্যমাত্রায় আমদানি–রপ্তানি শুল্ক আদায়ের লক্ষ্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৪০ কোটি টাকা—যা আগের চেয়ে ১৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বেশি। মূসক ও আয়করের লক্ষ্যও ২০ হাজার ৩৫০ কোটি করে বাড়ানো হয়েছে, ফলে প্রতিটি খাতের নতুন লক্ষ্যমাত্রা হয়েছে ২ লাখ ৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা।
প্রথম চার মাসে আমদানি–রপ্তানি শুল্ক থেকে ৩৪ হাজার ৭৫১ কোটি, স্থানীয় পর্যায়ে মূসক থেকে ৪৬ হাজার ৮৭৮ কোটি এবং আয়কর ও ভ্রমণ কর মিলিয়ে ৩৭ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ হয়েছে। এর মধ্যে স্থানীয় পর্যায়ে মূসকে সর্বোচ্চ ২৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা গেলেও কোনো খাতই নির্ধারিত লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি।
একক মাস হিসেবে অক্টোবর মাসে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ২ দশমিক ২২ শতাংশ; ওই মাসে আদায় হয়েছে ২৮ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা। শুল্ক খাতে প্রবৃদ্ধি নেমে যায় ঋণাত্মক ১৬ দশমিক ০৯ শতাংশে, যদিও মূসকে প্রবৃদ্ধি হয় ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং আয়করে ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ।









