মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত হলো এক অনন্য নির্বাচন, যেখানে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন বিচারপতি ও ম্যাজিস্ট্রেটরা। এভাবে বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণে সরাসরি জনসম্পৃক্ততা এনেছে দেশটি, যা বিশ্বে প্রথম।
রোববারের এই ভোটের মাধ্যমে মেক্সিকো হয়ে উঠেছে একমাত্র দেশ, যেখানে সর্বস্তরের বিচারক ও ম্যাজিস্ট্রেট গণভোটের মাধ্যমে নির্ধারিত হন। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এটি বিচারব্যবস্থার দুর্নীতি ও পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ রোধে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তবে বিশ্লেষক ও বিরোধীরা এই উদ্যোগকে বিচার বিভাগের রাজনীতিকীকরণ হিসেবে দেখছেন।
নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম এই নির্বাচনকে পুরোনো ও অনুৎপাদনশীল বিচারব্যবস্থা ভাঙার অংশ হিসেবে তুলে ধরেছেন। তিনি দাবি করেছেন, যারা ক্ষমতার পরিবর্তন চায় না, তারাই এই ব্যবস্থার সমালোচনা করছে। এই পরিকল্পনার পেছনে ছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাদোর, যিনি শেইনবাউমের রাজনৈতিক অভিভাবক হিসেবেই পরিচিত।
এদিকে মেক্সিকো সিটির রাস্তায় হাজারো মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেন। তাদের দাবি ছিল, বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা হোক। অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, এই ব্যবস্থার ফলে নিরপেক্ষ বিচারিক প্রক্রিয়া হুমকির মুখে পড়তে পারে।
এই নির্বাচনের মাধ্যমে প্রায় ৮৮০ জন ফেডারেল বিচারক, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, এবং শত শত স্থানীয় বিচারক ও ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচন করা হয়েছে। তবে ভোটার উপস্থিতি ছিল তুলনামূলকভাবে কম, কারণ অনেকেই প্রার্থীদের সম্পর্কে যথাযথ তথ্য পাননি। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিকা লুসিয়া কালদেরন বলেন, “আমরা সেভাবে প্রস্তুত ছিলাম না, আরও তথ্য দরকার ছিল।”
কিছু ভোটার জানিয়েছেন, তারা বাধ্যবাধকতার কারণে ভোট দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ বিচারব্যবস্থার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন বলেও জানিয়েছেন। কারখানাকর্মী রাউল বেরনাল বলেন, “সব দলই এক রকম, আমার আর আগ্রহ নেই।”
এদিকে মানবাধিকার সংস্থা ডিফেন্সরক্স জানিয়েছে, প্রায় ২০ জন প্রার্থীকে “উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন সিলভিয়া ডেলগাদো, যিনি ছিলেন কুখ্যাত মাদক সম্রাট এল চ্যাপো গুজম্যানের আইনজীবী। এই বিষয়গুলো নতুন ব্যবস্থার নিরাপত্তা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আরও বিতর্ক উসকে দিচ্ছে।