অপারেশন সিঁদুর চলাকালীন পাকিস্তানের হামলায় ভারতীয় যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছিল কি না, তা নিয়ে এতদিন ভারতের পক্ষ থেকে কোনো স্পষ্ট বক্তব্য না থাকলেও এবার মুখ খুলেছেন সেনা সর্বাধিনায়ক অনিল চৌহান। তার বক্তব্যের পর দেশজুড়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক, বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছে সরকারের গোপনীয়তা নিয়ে।
কাশ্মিরের পেহেলগামে হামলার পর এপ্রিল মাসে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক চরম উত্তেজনায় পৌঁছায়। এই প্রেক্ষাপটে ভারত চালায় অপারেশন সিঁদুর। দুই দেশের মধ্যে সামরিক সংঘর্ষ শুরু হয়, যেখানে পাকিস্তান দাবি করে তাদের হামলায় ভারতের রাফাল যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে। এতদিন দিল্লি এ বিষয়ে নিরব থাকলেও, সিঙ্গাপুরে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অনিল চৌহান পরোক্ষভাবে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।
সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, যুদ্ধবিমান ধ্বংস হওয়া নয়, বরং কী কারণে তা হয়েছে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি স্বীকার করেন যে অন্তত একটি যুদ্ধবিমান পাকিস্তানের হামলায় ভূপাতিত হয়েছে এবং এর পেছনে কৌশলগত ভুল ছিল, যা তারা পরে শুধরে নেয়। তবে পাকিস্তানের দাবি অনুযায়ী ছয়টি যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে-এই দাবি অস্বীকার করেন চৌহান।
চৌহানের এই বক্তব্য প্রকাশ্যে আসার পর ভারত সরকারের ভূমিকা নিয়ে বিরোধীরা তীব্র সমালোচনা শুরু করেছে। তারা প্রশ্ন তুলেছে, কেন দেশের মানুষ বা সংসদকে না জানিয়ে বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে এই তথ্য দেওয়া হলো। পশ্চিমবঙ্গ থেকে নির্বাচিত এক সংসদ সদস্যের প্রশ্ন, কেন সরকার এতদিন এই ঘটনা গোপন রেখেছিল।
কংগ্রেস সভাপতি দাবি করেছেন, এই বিষয়ে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডেকে আলোচনা হওয়া উচিত। কেন্দ্রীয় সরকার জনগণকে বিভ্রান্ত করেছে এবং যুদ্ধ সংক্রান্ত বাস্তব তথ্য গোপন রেখেছে বলে তারা অভিযোগ তুলেছে। তাদের মতে, কারগিল যুদ্ধের পর যেমন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল, তেমনি এবারও একটি স্বতন্ত্র কমিটি গঠন করে যুদ্ধ প্রস্তুতির বিষয় খতিয়ে দেখা দরকার।
এদিকে, ট্রাম্প দাবি করেছেন তার মধ্যস্থতায়ই ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির পথে এসেছে। তিনি জানান, বাণিজ্যিক চাপের মাধ্যমে দুই দেশকে শান্তি আলোচনায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তবে চৌহান পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা পুরোপুরি নাকচ করে দেন। তার মতে, পারমাণবিক সংঘর্ষের মতো পরিস্থিতি গড়ে ওঠেনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুদ্ধকালীন সময়ে তথ্য গোপন রাখাটা সেনাবাহিনীর পক্ষে অস্বাভাবিক নয়। তবে সরকারের বক্তব্য এবং প্রতিরক্ষা কর্তাদের স্বীকারোক্তির মধ্যে ফারাক জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। অনেকে মনে করছেন, এত ব্যয়বহুল রাফাল কিনেও যদি যুদ্ধক্ষেত্রে কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তবে তা সরকারকে রাজনৈতিকভাবে চাপে ফেলবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ২০১৯ সালের বালাকোট অভিযানের মতো এবারও যুদ্ধ পরিস্থিতিকে ব্যবহার করে সরকার রাজনৈতিক লাভ তুলতে চাইতে পারে। তবে চৌহানের বক্তব্য যেভাবে সামনে এসেছে, তা সরকার এবং শাসক দলের ভাবমূর্তিতে প্রভাব ফেলতে পারে। ভোটবাক্সে তার প্রভাব পড়বে কি না, তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।