শনিবার
২রা আগস্ট, ২০২৫
১৮ই শ্রাবণ, ১৪৩২

আমরা জনতার পক্ষে সত্য বলি

বেলকুচিতে ঋণের চাপে ধুঁকছে তাঁতিরা

Fresh News রিপোর্ট
জুলাই ৭, ২০২৫
৩:৩৮ অপরাহ্ণ

সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড থেকে নেওয়া ক্ষুদ্র ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না তাঁতিরা। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে নতুন করে সরকারি ঋণ নেওয়ার পথ। এতে অঞ্চলের বেশিরভাগ তাঁতি এখন মহাজন ও দাদন ব্যবসায়ীদের সুদের জালে জড়িয়েছেন। সেই ঋণের চাপে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা।

জানা গেছে, বেলকুচিতে প্রায় ৮ হাজার তাঁতির দেখভাল ও ঋণ বিতরণের দায়িত্ব তাঁত বোর্ডের বেসিক সেন্টারের। প্রয়োজনের চেয়ে লোকবল কম থাকায় প্রতিষ্ঠানটি তাঁতিদের কাছে পড়ে থাকা ঋণ আদায় ও নতুন ঋণ বিতরণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না।
২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠানটি স্থাপিত হওয়ার পর ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত উপজেলার ২৫০০ জন তাঁতিকে প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে ১২০০ তাঁতির ঋণ বকেয়া পড়ে আছে। ফলে তারা নতুন করে ঋণ নিতে পারছেন না।

তাঁত বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ২০ বছর আগে তাঁত বোর্ড দুটি প্রকল্পে তাঁতিদের মধ্যে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে। একটি প্রকল্পে পিটলুম তাঁতের বিপরীতে ১০ হাজার, সেমি অটো তাঁতের বিপরীতে ১৩ হাজার ও বেনারসি তাঁতের বিপরীতে ১৮ হাজার টাকা ও আরেক প্রকল্পে তাঁতি শ্রেণিভেদে কমপক্ষে ৫০ হাজার থেকে আড়াই লাখ ও ৩০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা ঋণ প্রদান করা হয়।

বেলকুচি বেসিক সেন্টার সূত্রে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী তাঁতিদের ঋণ পেতে হলে তাদের পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডভিত্তিক পর্যায়ের প্রাথমিক তাঁতি সমিতির সদস্য হতে হয়। বেলকুচিতে ৩৮টি সমিতি রয়েছে। সমিতির আওতাভুক্ত কোনো তাঁতি ঋণ গ্রহণে ইচ্ছুক হলে তাকে সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমে বেসিক সেন্টারে আবেদন করতে হয়। বেসিক সেন্টারের কর্মকর্তারা সরেজমিনে তাঁতিদের অবস্থা দেখে ঋণ অনুমোদনের জন্য তাঁত বোর্ডে পাঠিয়ে দেন। তাঁত বোর্ড থেকে অনুমোদন পাওয়া গেলে বেসিক সেন্টারের মাধ্যমে তাঁতিদের সেই ঋণ কৃষি ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয় থেকে তুলতে হয়। পরে উত্তোলিত ঋণ ৫ শতাংশ সুদে তিন বছরের মধ্যে মাসিক কিস্তিতে শোধ করতে হয়।

তবে ঋণ গ্রহণকারী তাঁতিরা জানান, ঋণের জন্য আবেদন করার পর ঋণ পেতে কত দিন লাগবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। অনেক সময় দু-এক বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও তাঁত বোর্ড থেকে ঋণ প্রদানের অনুমোদন আসে না। এভাবে অনেকেই একসময় ঋণ পাওয়ার ব্যাপারে হাল ছেড়ে দেন। এদিকে নিয়মানুযায়ী, কোনো সমিতির সদস্যদের মধ্যে বিতরণ করা ঋণের ৬০ ভাগ আদায় না হলে ওই সমিতির আর কোনো সদস্যকে নতুন করে আর ঋণ দেওয়া হয় না। সিংহভাগ সমিতির ৬০ ভাগ ঋণ আদায় না হওয়ায় বর্তমানে এই ঋণ দেওয়া বন্ধ রয়েছে।

বেলকুচি পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড প্রাথমিক তাঁতি সমিতির সভাপতি ইমরাম হোসেন বলেন, তাঁতিদের এখন খুবই দুঃসময় চলছে। এ কারণে অনেক তাঁতির ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। আমার সমিতির ৪৫ জন সদস্য প্রায় এক কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল। কিন্তু পরিশোধ করেছে মাত্র ৬ জন সদস্য। বাকি ৩৯ জন সদস্য ঋণ পরিশোধ না করায় নতুন ঋণের আবেদন করা যাচ্ছে না।

একই পৌরসভার ৮নম্বর ওয়ার্ড প্রাথমিক তাঁতি সমিতির সভাপতি আব্দুল কাদের বলেন, সমিতির বেশির ভাগ সদস্যরা ঋণ পরিশোধ করতে পারছেনা। অনেকেই আবার ঋণগ্রস্ত হয়ে দাদন ব্যবসায়ীদের সুদের জালে পড়ে তাঁত বিক্রি করেছেন। এসব কারণে অন্য সদস্যরা আর ঋণ পাচ্ছেনা। প্রকৃতপক্ষে এই ঋণ সব তাঁতির ভাগ্যে জোটে না।

তাঁতিদের এখন খুবই দুঃসময় চলছে। এ কারণে অনেক তাঁতির ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। আমার সমিতির ৪৫ জন সদস্য প্রায় এক কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল। কিন্তু পরিশোধ করেছে মাত্র ৬ জন সদস্য। বাকি ৩৯ জন সদস্য ঋণ পরিশোধ না করায় নতুন ঋণের আবেদন করা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ জাতীয় তাঁতি সমিতির সভাপতি আব্দুস ছামাদ খান বলেন, তাঁত শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে প্রত্যেক সদস্যকে নিয়মিতভাবে ঋণ দেওয়া প্রয়োজন। সমিতির কিছু সদস্যের কারণে অন্য সদস্যরা ঋণ পাবে না। এটা এক ধরনের বৈষম্য। তাঁত বোর্ডের এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা প্রয়োজন বলে মনে করি।