মঙ্গলবার
৫ই আগস্ট, ২০২৫
২১শে শ্রাবণ, ১৪৩২

আমরা জনতার পক্ষে সত্য বলি

১৬ জুলাই চট্টগ্রামে রক্তাক্ত স্মৃতি, শহীদদের বিচার চায় পরিবার ও সহযোদ্ধারা

Fresh News রিপোর্ট
জুলাই ১৭, ২০২৫
১০:৫৬ পূর্বাহ্ণ

গত বছরের ১৬ জুলাই চট্টগ্রামে কোটা সংস্কার আন্দোলন রক্তাক্ত রূপ নেয়। সেদিনের সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হারান ছাত্রদল নেতা ওয়াসিম আকরাম, শিবির নেতা ফয়সাল হোসেন শান্ত ও দোকান কর্মচারী ফারুক। সেই দিনটি স্মরণ করে নিহতদের পরিবার ও আন্দোলনের সহযোদ্ধারা আজও বিচার প্রত্যাশায় প্রহর গুনছেন।

সেদিন শহরের ষোলশহর রেলস্টেশন এলাকায় সমাবেশের ডাক দিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। হুমকি ও বাধা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীরা জড়ো হন, কিন্তু ছাত্রলীগ-যুবলীগ ক্যাডাররা সেখানে হামলা চালায়। গুলি, ককটেল বিস্ফোরণ, ইটপাটকেল নিক্ষেপে দীর্ঘ সাড়ে তিন ঘণ্টার সংঘর্ষে নিহত হন তিনজন এবং আহত হন বহুজন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও আশপাশের এলাকায় তৈরি হয় বিভীষিকাময় পরিস্থিতি। অ্যাম্বুলেন্স, রিকশা ও ভ্যানে করে আহতদের আনা হয় হাসপাতালে। স্থানীয়রা ও রেড ক্রিসেন্ট সদস্যরা উদ্ধারকাজে অংশ নেন। রক্তাক্ত ওই দিনটির স্মৃতি আজও তাড়িয়ে বেড়ায় প্রত্যক্ষদর্শী ও শহীদদের স্বজনদের।

নিহত ছাত্রদল নেতা ওয়াসিম আকরাম ছিলেন চট্টগ্রাম কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্র এবং কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। তার মা আজও শোক সইতে না পেরে শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। এক বছর ধরে তিনি শয্যাশায়ী। বাবা শফি আলম বলেন, মা হারিয়েছি, এরপর ছেলেকে হারালাম। স্ত্রী অসুস্থ, সন্তানের লাশের ভার এখনও বুকেই জমে আছে।

শহীদ ফয়সাল হোসেন শান্তর মা কোহিনূর বেগম প্রতিদিন কাঁদেন। বলেন, ছেলের দুঃখ হবে বলে তাকে কোনো কষ্ট দিতে দিতেন না। আজ এক বছর ধরে সেই কষ্টই সহ্য করে যাচ্ছেন। শান্তর ফেসবুক প্রোফাইলে লেখা, ‘যে হৃদয় শাহাদাতের উচ্চাকাঙ্ক্ষা লালন করে, সে হৃদয় কখনো হতাশ হয় না।’

অপর নিহত দোকান কর্মচারী ফারুকের স্ত্রী সীমা আক্তার বলেন, স্বামী হারানোর বেদনা এখনও তাড়া করে বেড়ায়। তিনি হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।

সেদিনের ঘটনায় প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারী ও আন্দোলনকারীরা বলেন, হামলার নেতৃত্ব দেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি। তার নেতৃত্বে শতাধিক ক্যাডার শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, আইআইইউসি ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। সেদিনের সহিংসতা আন্দোলনে নতুন মাত্রা এনে দেয়।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক মশিউর রহমান জানান, ছাত্রলীগ-যুবলীগের ক্যাডাররা ফেসবুকে অস্ত্রের ছবি দিয়ে হুমকি দিয়েছিল, যাতে আন্দোলনকারীরা ভীত হয়ে পড়ে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা দমে না গিয়ে রাস্তায় নামে এবং আত্মরক্ষায় সংগঠিত প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান জানান, ওয়াসিমদের রক্তে আন্দোলন নতুন গতি পায় এবং দেশজুড়ে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে।

আহত ও নিহতদের পরিবার, সহযোদ্ধা এবং সাধারণ মানুষ একস্বর দাবি করছেন—১৬ জুলাইয়ের গণহত্যার ন্যায়বিচার হোক এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।