মানবপাচার ও আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে আলোচিত রবিজুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) থানা পুলিশ। রোববার (২০ জুলাই) সকালে পাটিকাবাড়ি ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে একাধিক থানায় মামলা রয়েছে।
রবিজুল কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ি গ্রামের আয়নাল মণ্ডলের ছেলে। তিনি লিবিয়ায় ১৫ বছর ছিলেন এবং আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য হিসেবে পরিচিত। পাশাপাশি তিনি একে একে সাতজন নারীকে বিয়ে করে আলোচিত হন। দেশের বিভিন্ন স্থানে চাকরির লোভ দেখিয়ে বহু সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী কুষ্টিয়ার তানজির শেখ জানান, ভালো বেতনের চাকরির প্রলোভনে রবিজুল তাকে লিবিয়ায় পাঠান এবং সেখানকার একটি মাফিয়া চক্রের কাছে বিক্রি করে দেন। এরপর টানা ৯ মাস তাকে বন্দি রেখে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। মুক্তিপণ হিসেবে তানজিরের পরিবারের কাছ থেকে আদায় করা হয় ৩৪ লাখ টাকা। ট্যুরিস্ট ভিসায় পাঠিয়ে প্রতারণার শিকার এই যুবক ৯ জুলাই দেশে ফেরেন।
তানজির জানান, তাকে বেঁধে ফেলে প্রতিদিন লোহার রড ও লাঠি দিয়ে পেটানো হতো। দিনের পর দিন না খাইয়ে রেখে অমানবিক নির্যাতনের মাধ্যমে পরিবারকে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করা হতো। এসময় শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে এবং শারীরিকভাবে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।
তানজিরের বাবা সিরাজ শেখ জানান, ১১ লাখ টাকার চুক্তিতে ছেলেকে পাঠানোর পর আরও ২৫ লাখ টাকা দাবি করে রবিজুল। পরে নলখোলা গ্রামের এক ব্যক্তি আলামিন আবার নতুন করে ১৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা নেয়, কিন্তু কোনও ফল হয়নি। শেষে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ছেলেকে উদ্ধার করতে হয়। তিনি রবিজুল ও আলামিনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।
রবিজুলের প্রতারণার শিকার আরও বহু মানুষ ইবি থানায় হাজির হয়ে অভিযোগ করেছেন। তাদের দাবি, রবিজুল ৬০ থেকে ৭০ জনের কাছ থেকে কোটি টাকার প্রতারণা করেছেন। এমনই একজন মাহাবুল আলম জানান, তার ভাগিনা আসিফকে ১৫ লাখ টাকায় লিবিয়া নিয়ে গিয়ে নির্যাতনের পর ফেরত পাঠানো হয়।
ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান জানান, রবিজুলের বিরুদ্ধে ইবি ও সদর থানায় ৫-৬টি মামলা রয়েছে। এছাড়া আলমডাঙ্গা, কুমারখালীসহ বিভিন্ন থানায় মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। অভিযোগ যাচাই করে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।