সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আজকাল অনেকেই নিজেদের আবেগ ও সমস্যাগুলো শেয়ার করে। একদিকে যেমন কিছু মানুষ সহানুভূতি পেতে চায়, তেমনি কিছু ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে মনোযোগ আকর্ষণের জন্য মিথ্যা আবেগী পোস্ট দেন। এই প্রবণতাকে বলা হয় ‘স্যাডফিশিং’।
২০১৯ সালে সেলিব্রেটি মডেল কেন্ডাল জেনারের সমালোচনায় সাংবাদিক রেবেকা রিড প্রথম ‘স্যাডফিশিং’ শব্দটি ব্যবহার করেন। তিনি লক্ষ্য করেন, কেন্ডাল জেনার সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্রণ নিয়ে একটি সহানুভূতির গল্প শেয়ার করেছিলেন, যা পরবর্তীতে বিজ্ঞাপনের অংশ হিসেবে প্রকাশ পায়। এই ধরনের মিথ্যা আবেগী পোস্টের জন্যই স্যাডফিশিং শব্দটি জনপ্রিয় হয়।
এটি মূলত সেই প্রবণতা, যেখানে মানুষ নিজের দুর্বলতা বা দুঃখ অতিরঞ্জিত করে অনলাইনে শেয়ার করে, শুধুমাত্র সহানুভূতি বা মনোযোগ পেতে। আচরণ বিশেষজ্ঞ কারা পেট্রোফেস জানান, এই প্রবণতা বিশেষ করে ‘অ্যাংশাস অ্যাটাচমেন্ট স্টাইল’ (অভ্যস্ত সম্পর্কের প্রতি উদ্বেগ) মানুষের মধ্যে বেশি দেখা যায়। এই ব্যক্তিরা নিজেদের স্বীকৃতি এবং আশ্বাসের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিরিক্ত আবেগপূর্ণ পোস্ট করেন।
এমন কিছু পোস্টের মধ্যে যেমন প্রাক্তনদের উদ্দেশে বিষণ্নতা প্রকাশ করা, তেমনি কেউ কেউ বাস্তবিক পরিস্থিতি ছাড়া নিজের দুঃখের কথা শেয়ার করেন, যা প্রকৃতপক্ষে অন্যদের সহানুভূতি বা সমর্থন পাওয়ার জন্য করা হয়।
তবে মনস্তত্ত্ববিদরা মনে করেন, সহানুভূতি বা সমর্থন চাওয়ার এই প্রবণতা স্বাভাবিক। কিন্তু যখন এটি অতিরঞ্জিত হয়ে ওঠে, তখন এটি স্যাডফিশিং হয়ে যায়। এর ফলে মানুষ বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে আত্মমর্যাদা কমে যেতে পারে এবং উদ্বেগ বাড়তে পারে।
এছাড়া, স্যাডফিশিং ও সত্যিকার আবেগী পোস্টের মধ্যে একটি স্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। যাদের আসলেই সাহায্যের প্রয়োজন, তারা তাদের দুঃখ বা সমস্যার কথা শেয়ার করে সাহায্য চায়। কিন্তু যাদের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র মনোযোগ আকর্ষণ, তারা নিজের আবেগকে অতিরঞ্জিত করে দেখান।
এই ধরনের পোস্টের জন্য কিছু মানুষ সামাজিকভাবে অবহেলিত বা উপেক্ষিত হয়ে পড়েন, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।