‘নাতনি ফোনে বলেছে লাল জামার কথা। ভাবছিলাম বাড়ি গিয়ে কিনে দেবো। কিন্তু এখানেই দেখে শুনে ৪০০ টাকায় কিনে ফেললাম। নাতনি খুব খুশি হবে।’ – হাসিমুখে কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর সদরঘাট টার্মিনালের প্রবেশমুখে দাঁড়িয়ে থাকা পঞ্চাশোর্ধ আব্দুল মান্নান। তার চোখেমুখে ঈদের আনন্দ নয়, ছিল প্রিয়জনের জন্য কিছু করার তৃপ্তি।
ঈদ ঘনিয়ে এলে প্রিয়জনদের মুখে হাসি ফোটাতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত মানুষজন ব্যস্ত হয়ে পড়েন কেনাকাটায়। বিশেষ করে যারা বাড়ি ফিরছেন, তাদের মধ্যে এক ধরনের তাড়াহুড়ো তৈরি হয় – বাড়ি যাওয়ার আগে মা-বাবা, ভাই-বোন বা সন্তানদের জন্য কিছু নিয়ে ফেরা। সেই চেষ্টায় অনেকেই বড় মার্কেটের ভিড় এড়িয়ে নিচ্ছেন ফুটপাত কিংবা ছোট দোকানের পথ।
সদরঘাট, গুলিস্তান, সায়দাবাদসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পুরুষ, নারী ও শিশুদের জন্য পোশাকের বিশাল সম্ভার দেখা গেছে। পাঞ্জাবি, শার্ট, সালোয়ার-কামিজ, শাড়ি, থ্রি-পিস, জুতা, টুপি – সবই মিলছে কম দামে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষের জন্য এসব ফুটপাত যেন ঈদের বাজারের আস্থার জায়গা।
ফুটপাতের বিক্রেতা মাহফুজ আলম বলেন, “আমরা ক্রেতার বাজেটের কথা মাথায় রেখে পোশাক বিক্রি করি। স্বল্প লাভে বেশি বিক্রি করে যে সাড়া পাই, তাতেই আমাদের লাভ হয়ে যায়।” আরেক বিক্রেতা জয়নাল আবেদীন বলেন, “আমরা চাই না কেউ খালি হাতে ফিরে যাক। তাই সামর্থ্য অনুযায়ী দাম কমিয়ে দেই। ঈদের সময় মানুষের চোখে মুখে যে আনন্দ দেখি, সেটাই আমাদের প্রাপ্তি।”
এই বাজারে ৪০০-৫০০ টাকায় পাঞ্জাবি, ২০০-৩০০ টাকায় পায়জামা ও টিশার্ট, ৩০০-৫০০ টাকায় শার্ট, ৪০০-৭০০ টাকায় জুতা, এবং ১০০-৩০০ টাকায় টুপি ও আতর পাওয়া যাচ্ছে। ফলে যারা সীমিত বাজেটে ঈদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাদের জন্য এটি হয়ে উঠেছে নির্ভরতার জায়গা।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী লাবণী আক্তার জানান, “দীর্ঘদিন পর ঈদে বাড়ি যাচ্ছি। মা-বাবার জন্য শাড়ি আর পাঞ্জাবি কিনেছি। তাদের মুখে হাসি দেখার জন্যই সব আয়োজন।”
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাসিব বিল্লাহ বলেন, “টিউশনির জমানো টাকা দিয়ে মা-বাবা আর ভাতিজির জন্য নতুন জামা কিনেছি। এটি আমার ঈদের সবচেয়ে বড় আনন্দ।”
চাকরিজীবী আলমগীর হোসেন বলেন, “ব্যস্ততার কারণে বড় মার্কেটে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। তাই বাড়ি ফেরার আগেই ফুটপাত থেকে পরিবারের সবার জন্য পোশাক কিনলাম। ওদের খুশি দেখার চেয়ে বড় উপহার আর কিছু হতে পারে না।”
বিক্রেতারা মনে করছেন, রমজানের ২৭ রোজা ও শবে কদরের পর বিক্রি আরও জমে উঠবে। তখন ভিড় বেড়ে যাবে কয়েকগুণ। তবে যেটা এখনই স্পষ্ট – ঈদ শুধু নতুন পোশাকের নয়, বরং প্রিয়জনের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টার মধ্যেই এর সবচেয়ে বড় আনন্দ লুকিয়ে আছে।