মঙ্গলবার
২২শে এপ্রিল, ২০২৫
৯ই বৈশাখ, ১৪৩২

আমরা জনতার পক্ষে সত্য বলি

ছুটির আমেজে উপচে পড়া ভিড়, তবুও স্বস্তিতে ঈদযাত্রা

Fresh News রিপোর্ট
মার্চ ২৭, ২০২৫
১২:০০ অপরাহ্ণ

বাড়ি ফেরার তাড়নায় ঢাকার বাস কাউন্টারগুলোতে যেন ঈদের আগাম উৎসব। বুধবার (২৬ মার্চ) রাতে কল্যাণপুর, শ্যামলী, খাজা মার্কেট—প্রায় সব বাস কাউন্টারেই উপচে পড়া ভিড়। টিকিট হাতে নিয়ে অপেক্ষা করছেন শত শত মানুষ, যাদের চোখে-মুখে একটাই প্রত্যাশা—সময়মতো বাস ছাড়ুক, নিরাপদে প্রিয়জনের কাছে পৌঁছানো যাক।

কল্যাণপুরের হানিফ কাউন্টারের সামনে ছোট্ট মেয়ে মেহেরজানকে নিয়ে ফুটপাতে বসে পড়েছেন আফসানা। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, “বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়ি সবার জন্য কেনাকাটা করেছি। এই অপেক্ষাটা মধুর যন্ত্রণা। কতক্ষণে ফিরব বাড়ি, সেটাই ভাবছি।”
তার মতে, আগের ঈদগুলোর তুলনায় এবার এখনো তেমন কোনো ভোগান্তি হয়নি। নেই যানজট, নেই বাস শিডিউলের বিপর্যয়।

বাসগুলো সময়মতো ছাড়লেও যাত্রীদের সবচেয়ে বড় ভোগান্তি লাগেজ নিয়ে বসার জায়গা না পাওয়া। প্রায় প্রতিটি কাউন্টারের সামনেই দেখা গেছে যাত্রীরা ব্যাগ-সামান নিয়ে বসে অপেক্ষা করছেন, কারণ ভেতরে আর জায়গা নেই।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নয়জনের একটি দল এসেছেন বসুন্ধরা এলাকা থেকে। তাদেরই একজন শরিফুল ইসলাম বলেন, “যানজটের ভয় ছিল, তাই আগে রওনা দিয়েছি। সময়মতো পৌঁছেছি, বাসও শিডিউলমতো ছাড়বে বলেছে। শুধু বসার জায়গাটুকুই নেই।”

দিনাজপুরগামী যাত্রী রায়হান বলেন, “মা এবার একা ঈদ করবে, বাবা নেই। বউ-বাচ্চা নিয়ে যাচ্ছি। আমাদের ছোট ছেলে সালাউদ্দিন এবারই প্রথম দাদু বাড়ি ঈদ করতে যাচ্ছে—ওর আনন্দ দেখে মন ভালো হয়ে যাচ্ছে।”

টিকিট বিক্রেতা শামীম জানান, “এখনো সড়কে কোনো বড় জটিলতা নেই। যাত্রীরা হয়তো যানজট এড়াতে আগেই চলে এসেছেন, তাই কাউন্টারে ভিড় বেড়েছে। বাস ছাড়ছে ঠিক সময়েই।”

দেশ ট্রাভেলসের টিকিট বিক্রেতা খালিদ হাসান বললেন, “২৫ মার্চ কিছুটা চাপ ছিল সড়কে। আজ সড়ক ফাঁকা, কিন্তু কাউন্টারে যাত্রীতে ঠাসা। মনে হচ্ছে এবার সবাই আগেভাগেই ছুটি পেয়েছেন।”

হানিফ পরিবহনের চালক বকুল হোসেন জানান, “এবার যাত্রীদের লাগেজ অনেক বেশি। বাসে উঠানোর সময়ও বাড়ছে। তবে সবকিছু ম্যানেজ করে ফেলছি।”

ঠাকুরগাঁওগামী যাত্রী নুরজাহান সীমা বললেন, “স্বামী ঈদের আগের দিন ছুটি পাবে। তাই আমি আর ছেলে আগেই যাচ্ছি। কতক্ষণে পৌঁছাব বাড়ি, এখন সেই অপেক্ষা। ছুটির আনন্দ, বাড়ির টান—সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে ঈদ তো শুরু হয়ে গেছে।”

বাস টার্মিনালজুড়ে তাই একটাই চিত্র—অপেক্ষা, ব্যাগের ভিড়, বসার জায়গার হাহাকার; কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে ঈদের স্বস্তি আর ঘরে ফেরার আনন্দে মুখর পুরো নগরজীবন।