সোমবার
২১শে এপ্রিল, ২০২৫
৮ই বৈশাখ, ১৪৩২

আমরা জনতার পক্ষে সত্য বলি

ভাসানচর নিয়ে হাতিয়া-সন্দ্বীপ বিরোধে নতুন উত্তেজনা

Fresh News রিপোর্ট
এপ্রিল ১০, ২০২৫
১০:০৮ পূর্বাহ্ণ

বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে জেগে ওঠা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ভাসানচর নিয়ে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও নোয়াখালীর হাতিয়ার বাসিন্দাদের মাঝে। সীমানা নির্ধারণ নিয়ে দীর্ঘদিনের এ দ্বন্দ্ব নতুন করে প্রাণ পেয়েছে সাম্প্রতিক সরকারি প্রতিবেদন ও সিদ্ধান্তের আলোকে।

২০১০ সালে দৃশ্যমান হওয়া ভাসানচর দ্বীপটি প্রথম আলোচনায় আসে ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা পুনর্বাসন প্রকল্পের মাধ্যমে। ওই বছরই জরিপের মাধ্যমে দ্বীপটি হাতিয়া উপজেলার অন্তর্ভুক্ত হিসেবে রেকর্ড করা হয়। তবে শুরু থেকেই সন্দ্বীপবাসীরা দাবি করে আসছেন, ভাসানচর তাদের ভূখণ্ডের অংশ। যদিও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ওবায়দুল কাদেরের প্রভাবে হাতিয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত এসেছে বলে অভিযোগ থাকলেও, সে সময় রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে বড় কোনো আন্দোলন গড়ে ওঠেনি।

কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতায় আসার পর পরিস্থিতি পাল্টেছে। ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে আগের সরকারের পতনের পর সন্দ্বীপের মানুষ সক্রিয়ভাবে ভাসানচরকে নিজেদের ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানাচ্ছেন। এ দাবির প্রেক্ষিতে গঠিত হয়েছে সীমানা নির্ধারণ বিষয়ক একটি সরকারি কমিটি, যার সুপারিশে সম্প্রতি চট্টগ্রাম জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস একটি প্রতিবেদন জমা দেয়। সেই প্রতিবেদনে ভাসানচরকে সন্দ্বীপ উপজেলার অংশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জিআইএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে সিএস ও আরএস মৌজা ম্যাপ পেন্টাগ্রাফ করে দেখা গেছে, ভাসানচরের ছয়টি মৌজা—ভাসানচর, শালিকচর, চর বাতায়ন, চর মোহনা, চর কাজলা ও কাউয়ারচর—সন্দ্বীপের সীমানায় অবস্থিত। যদিও দিয়ারা জরিপে এগুলো হাতিয়ার অন্তর্ভুক্ত ছিল।

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সাদিউর রহিম জাদিদের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে এসব তথ্য উল্লেখ করে বিষয়টি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য জেলা প্রশাসকের দপ্তরে প্রেরণ করা হয়। আগামী ১০ এপ্রিল গঠিত কমিটির দ্বিতীয় সভায় বিষয়টির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সন্দ্বীপের ইউএনও রিগ্যান চাকমা দাবি করেন, ভাসানচর তাদের উপজেলা থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে, যেখানে হাতিয়া থেকে দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। ১৯৫৫ সালের গেজেটে চরটি সন্দ্বীপের অন্তর্ভুক্ত ছিল বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তার মতে, ভাসানচর সন্দ্বীপেরই অংশ এবং তার ভূ-প্রমাণ ও প্রশাসনিক দলিল আছে।

অন্যদিকে এ সিদ্ধান্তের খবরে উত্তাল হয়ে উঠেছে হাতিয়ার সাধারণ মানুষ। ৭ এপ্রিল জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ ফেসবুকে লেখেন, “ভাসানচর হাতিয়ার ছিল, হাতিয়ারই থাকবে।” এরপর ৯ এপ্রিল চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে ‘হাতিয়া ছাত্র যুব পরিষদ’ নামের সংগঠন। তারা অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ও সন্দ্বীপের বাসিন্দা ফাউজুল কবিরকে ‘ষড়যন্ত্রের কেন্দ্র’ হিসেবে অভিযুক্ত করে তার পদত্যাগের দাবি জানান।

হাতিয়ার নেতারা বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে সরকারের সিদ্ধান্তে দিয়ারা জরিপ সম্পন্ন করে ভাসানচরকে হাতিয়ার অন্তর্ভুক্ত করে থানা গঠন করা হয়েছে। এটি আবার বিতর্কিত করার মাধ্যমে কিছু মহল অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চায়।

ভাসানচরকে ঘিরে দুই উপকূলীয় এলাকার দীর্ঘদিনের সীমানা বিরোধ এখন এক জটিল প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, সেদিকে তাকিয়ে আছে সন্দ্বীপ ও হাতিয়ার মানুষ।