কোরবানির ঈদ ঘনিয়ে আসতেই রাজধানীজুড়ে পশুর হাটগুলোতে জমে উঠেছে কেনাবেচার প্রস্তুতি। দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা গরু, ছাগলসহ কোরবানির পশুতে সেজেছে ঢাকার অস্থায়ী ও স্থায়ী হাটগুলো। এখনও বড় গরুর বেচাকেনা ধীরগতির হলেও মাঝারি ও ছোট গরুর বিক্রি কিছুটা বেড়েছে।
হাটে ঘুরে দেখা গেছে, অনেকেই পরিবারসহ হাটে গিয়ে দরদাম করে গরু কিনে বাসায় ফিরছেন। ফেরার পথে পরিচিত দৃশ্য— রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষজনের প্রশ্ন, “ভাই, দাম কত হলো?” যাদের বাড়ি হাট থেকে দূরে, তারা পিকআপ ভ্যানে গরু বহন করছেন। তবে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগে কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ক্রেতারা।
গরুর চাহিদা এখন মূলত মাঝারি ও ছোট আকৃতির দিকে। এক থেকে সোয়া লাখ টাকার গরুর দিকে আগ্রহ বেশি। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হবে ঈদের আগের দুই দিন এবং রাতেই। তবে বড় গরুর বিক্রি কম হওয়ায় অনেক বিক্রেতা কিছুটা চিন্তিত। কেউ কেউ বলছেন, শেষ রাতটা ‘লটারির রাত’— দাম বাড়তেও পারে, কমতেও।
মেরুল বাড্ডার হাটে সিরাজগঞ্জ থেকে গরু নিয়ে আসা বিক্রেতা জানিয়েছেন, বড় গরুর দরদাম কেউ করছে না। মাঝারি গরু নিয়েই চলছে বেশি আলোচনা। কুষ্টিয়া থেকে আসা আরেক বিক্রেতা বলেন, তিন মণের গরুর দাম চাওয়া হয়েছিল দেড় লাখ, অথচ ক্রেতারা বলছেন এক লাখ— তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শেষ রাত অব্দি অপেক্ষা করবেন।
গুলশানের বাসিন্দা একজন ক্রেতা জানান, হাটে প্রচুর গরু থাকলেও এখনো তেমন ভিড় হয়নি। ঢাকার মানুষ শেষ মুহূর্তে গরু কেনে— গরু রাখার জায়গার অভাবে অনেকেই দেরিতে কেনেন। তার মতে, বড় গরুর দাম তুলনামূলক কম থাকলেও মাঝারি গরুর দাম কিছুটা বেশি।
শাহজাহানপুরের এক বিক্রেতা জানান, বড় গরু এনেছেন বলেই কিছুটা দুশ্চিন্তায় আছেন। তবে মাঝারি গরুর বিক্রি ভালো চলছে। বেশিরভাগ ক্রেতা এখন দরদাম যাচাই করতে হাটে আসছেন, কিনছেন তুলনামূলক কম।
এবার ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে কোরবানির হাট বসেছে মোট ১৯টি। এর মধ্যে ১২টি ঢাকা উত্তর সিটিতে এবং ৭টি দক্ষিণ সিটিতে। গাবতলীর স্থায়ী হাট ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অস্থায়ীভাবে হাট বসেছে। মিরপুর, মোহাম্মদপুর, উত্তরা, খিলক্ষেত, তেজগাঁও, মেরুল বাড্ডা, রামপুরা, ডেমরা, পোস্তগোলা, দনিয়া, লালবাগ, হাজারীবাগসহ অনেক এলাকায় চলছে বেচাকেনা।
প্রতিবারের মতো এবারও হাটে দেখা গেছে নানা নামের গরু। ‘পরীমনি’, ‘ট্রাম্প’ নামের গরুতে আকর্ষণ থাকলেও ইউটিউবারদের ভিডিও করতে এসে বিরক্ত করছেন অনেক বিক্রেতাকে। অন্যদিকে হাটের পরিবেশে ঈদের আমেজ স্পষ্ট, আর কয়েকদিনের মধ্যেই রাজধানীর গলি-গলিতে শোনা যাবে গরুর ডাকে ঈদ চলে আসার ঘোষণা।
