রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের ঊর্ধ্বগতি এবং আমদানি ব্যয় কমার প্রভাবে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে ডলারের চাহিদা কমেছে। ফলে টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য ১২০ টাকার নিচে নেমে এসেছে, যা গত ১১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার মার্কেটিং ডলারের দাম ছিল ১১৯ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১২০ টাকা ১০ পয়সা। অথচ চলতি মাসের শুরুতে ডলারের দাম ছিল ১২২ টাকার উপরে। ধারাবাহিকভাবে দরপতনের মধ্য দিয়ে ১৪ জুলাই ডলারের দাম ১১৯ টাকায় নেমে আসে, যা সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল গত বছরের আগস্টে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এটি সাময়িক স্বস্তি দিলেও মুদ্রাবাজারে নজরদারি ও স্থিতিশীল নীতিমালা বজায় রাখা জরুরি। তাদের মতে, সরকারের পরিবর্তনের পর প্রবাসী আয় ও রপ্তানি থেকে আয় বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বাজারে ডলারের জোগান বাড়িয়েছে। পাশাপাশি আমদানির খরচ না বাড়ায় চাপ কমেছে ডলারের ওপর।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, গত কয়েক মাসে আইএমএফ, এডিবি, জাইকা ও এআইআইবি থেকে বড় অংকের বৈদেশিক সহায়তা এসেছে। এর ফলে রিজার্ভও বেড়েছে এবং বৈদেশিক বাণিজ্যে চলতি হিসাবে ঘাটতি কমেছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে হঠাৎ করে মাত্র দুই কার্যদিবসে ডলার ১২৮ টাকায় উঠে গিয়েছিল। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপে বাজার নিয়ন্ত্রণে আসে। ১৩টি ব্যাংকের বিরুদ্ধে অস্বাভাবিক দামে রেমিট্যান্স কেনার অভিযোগ ওঠে এবং তাদের ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়।
চলতি বছরের ১৫ মে থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের বিনিময় মূল্য নির্ধারণে নতুন পদ্ধতি চালু করে, যার ফলে ব্যাংক ও গ্রাহক নিজেরাই দাম নির্ধারণ করতে পারে। অনেকেই আশঙ্কা করেছিল এতে দাম বাড়বে, কিন্তু উল্টো তা কমে এসেছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে দেশের রপ্তানি আয় হয়েছে ৪ হাজার ৮৭ কোটি ডলার, আর আমদানি হয়েছে ৬ হাজার ২৫ কোটি ডলার। এতে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়ায় ১ হাজার ৯৩৮ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৪.১৭ শতাংশ কম।
রেমিট্যান্স প্রবাহেও রেকর্ড দেখা গেছে। সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ২৭ শতাংশ বেশি। এটি দেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স।
২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলারে, যা গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আগের বছর শেষে রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এই উন্নতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে প্রবাসী আয় উৎসাহিত করা, রপ্তানি বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া এবং আমদানি ব্যয় যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। তবেই মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে।