কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত রাজবাড়ীর সাগর আহমেদের মৃত্যুর এক বছর পূর্ণ হয়েছে। ২০২৩ সালের ১৯ জুলাই মিরপুর গোলচত্বরে প্রাণ হারান মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের দ্বিতীয় বর্ষের এই ছাত্র।
শহীদ সাগরের বাড়ি রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের বিল টাকাপোড়া গ্রামে। মৃত্যুর এক বছর পরেও পরিবার এখনও সেই শোক বহন করে চলেছে। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বাবা তোফাজ্জেল হোসেন ও মা গোলাপি বেগম ভেঙে পড়েছেন। বাড়ির প্রতিটি কোণ যেন সাগরের স্মৃতিতে ভারাক্রান্ত। তার ছোট বোন নুশমী, এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থী, ভাইয়ের কথা মনে করে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছে।
তোফাজ্জেল হোসেন জানান, ছেলেকে উচ্চশিক্ষার জন্য কষ্ট করে ঢাকায় পাঠিয়েছিলেন। সাগর বলত, একদিন বাবাকে মাঠের কাজ থেকে মুক্তি দেবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন একটিমাত্র গুলিতে শেষ হয়ে গেল। তিনি বলেন, ছেলের কোনো অপরাধ ছিল না, শুধু ন্যায়ের পাশে দাঁড়ানোর জন্যই তাকে জীবন দিতে হলো।
সাগরের মা গোলাপি বেগম বলেন, সাগর শুধু তাদের সন্তান নয়, সে ছিল তাদের ভরসা, ভবিষ্যৎ। গত এক বছর তাদের জীবনে কেবলই শূন্যতা আর কান্না। প্রতিটি দিন তারা হারানো ছেলেকে মনে করে ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছেন।
প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ১৮ জুলাই বাদ জুমা শহীদ সাগরের নিজ বাড়িতে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। সেখানে জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার উপস্থিত থেকে পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কথা বলেন এবং সাগরের কবর জিয়ারত ও শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন।
এই আয়োজনেও অংশ নেন জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, আত্মীয়স্বজন এবং স্থানীয় জনগণ। পরদিন শনিবার বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজবাড়ী জেলা শাখার নেতারাও শহীদের কবর জিয়ারত করে তার পরিবারের খোঁজখবর নেন।
২০২৩ সালের ২০ জুলাই সাগরের মরদেহ তার গ্রামের বাড়িতে এনে দাফন করা হয়। আজও তার পরিবার ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে।