শুক্রবার
১লা আগস্ট, ২০২৫
১৭ই শ্রাবণ, ১৪৩২

আমরা জনতার পক্ষে সত্য বলি

ফ্যাসিবাদী শাসনের পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, ন্যায়বিচারে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান

Fresh News রিপোর্ট
জুলাই ২৭, ২০২৫
৭:২০ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশে যেন আর কখনো ভয় ও নিপীড়নের শাসন ফিরে না আসে – এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেছেন, একটি দমনমূলক শাসনের পতনের পর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।

রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত ‘আন্তর্জাতিক জুলাই বিপ্লব ২০২৪’ সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দমনমূলক শাসন ব্যবস্থায় রাষ্ট্রকে জনগণের বিরুদ্ধে অস্ত্রে পরিণত করা হয়েছিল। গুম-খুন, নির্যাতন, মতপ্রকাশে বাধা এবং ছাত্র ও সাংবাদিকদের দমন ছিল নিয়মিত ঘটনা। অনেক পরিবার আজও জানে না, তাদের প্রিয়জন জীবিত কি না।

আদিলুর রহমান আরও বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ নানা আইনি অস্ত্র ব্যবহার করে নির্বাচন, গণমাধ্যম ও ছাত্র আন্দোলনের কণ্ঠরোধ করা হয়েছিল। রাজনৈতিক মতপ্রকাশের দায়ে অনেককে রাতে ঘর থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হতো। কারাগারে ছিল দেশপ্রেমিক নাগরিকরা, অপরাধী নয়।

তিনি বলেন, আজ আমরা যে ফ্যাসিস্ট শাসনের পতন দেখেছি, তা আমাদের বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছে। র‌্যাব ও পুলিশকে ব্যবহার করা হয়েছিল ভয়ভীতি ছড়াতে, কবি, সাংবাদিক, শিক্ষক ও ছাত্রনেতাদের ‘অপরাধী’ বানিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে বাধা দেওয়া হয়েছিল মুক্তচিন্তায়।

বর্তমান পরিস্থিতিতে সতর্ক করে তিনি বলেন, শাসনব্যবস্থার পতন মানেই ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা নয়। বিচারব্যবস্থাকে ভয়মুক্ত করতে হবে, নিরাপত্তা বাহিনীর সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে এবং ছাত্র আন্দোলনের ওপর যেন কোনো দখলদারি না থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকার প্রশংসা করে আদিলুর রহমান বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছে, শ্রেণিকক্ষগুলো পরিণত হয়েছিল রণকৌশলের কেন্দ্রে, আর ছাত্ররা হয়ে উঠেছিল বিবেকের যোদ্ধা। তিনি বিদেশি গবেষক, অধ্যাপক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান, যারা বিপদের সময়েও বাংলাদেশের পাশে ছিলেন।

সম্মেলনে কি-নোট বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ‘দৈনিক আমার দেশ’-এর সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের যুদ্ধ ভারতের কোনো দান নয়, বরং ছিল এক সুপরিকল্পিত ভূ-রাজনৈতিক পদক্ষেপ। ভারতের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশকে তাদের প্রভাবাধীন রাখা। তবে বাংলাদেশের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ তা কখনো মেনে নেয়নি।

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৯ সালে ভারত পাঁচটি লক্ষ্য বাস্তবায়নের সুযোগ পায়—অনুগত সরকার, নিরাপত্তা হুমকির নিয়ন্ত্রণ, ভূ-প্রাকৃতিক সুবিধা, দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা এবং নিরাপত্তা যন্ত্র হিসেবে বাংলাদেশকে ব্যবহার। ভারতের গণতান্ত্রিক পরিচয় থাকা সত্ত্বেও তারা বাংলাদেশে কর্তৃত্ববাদী সরকারকে সমর্থন করে, কারণ তাতে তাদের কৌশলগত সুবিধা নিশ্চিত হয়।

সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মামুন আহমেদ, কূটনীতিক জন ড্যানিলোভিচ এবং তুরস্ক, মালয়েশিয়া ও যুক্তরাজ্যের শিক্ষাবিদ ও গবেষকরা।

সম্মেলনের শুরুতে শহীদ জাহিদুজ্জামান তানভীনের বাবা-মা তার হত্যার বিচার ও অপরাধীদের শাস্তি দাবি করে বক্তব্য দেন। দেশ-বিদেশের শিক্ষক, কূটনীতিক, মানবাধিকার কর্মী ও ছাত্রনেতারা এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।