বৃষ্টি ভেজা ভোরে যখন পুরো চট্টগ্রাম নগরী ঘুমে আচ্ছন্ন, তখন কর্ণফুলীর তীরঘেঁষা ফিশারি ঘাটে শুরু হয় প্রাণচাঞ্চল্য—জেলেদের নিয়ে আসা মাছ ঘিরে জমে ওঠে নিলাম, চলে কোটি টাকার বেচাকেনা।
মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ফিশারি ঘাটের প্রতিটি আড়তের সামনে স্তূপ করে রাখা হয়েছে বিভিন্ন রকমের মাছ। দোকানের মাঝখানে দাঁড়িয়ে বিক্রেতারা নিলাম ডাকে অংশ নিচ্ছেন, আর ক্রেতারা নিজেদের দর হাঁকাচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকার ও খুচরা ক্রেতারা ভোর থেকেই সেখানে ভিড় জমাচ্ছেন।
এই ঘাটে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকার মাছ কেনাবেচা হয় বলে জানিয়েছেন আড়তদারেরা। এখানে পাওয়া যায় সামুদ্রিক লাক্ষা, ইলিশ, কোরাল, দাতিনা কোরাল, রেড স্ন্যাপার, ভেটকি, সুরমা, চাপিলা, রূপচাঁদা, টুনা, স্কুইড, লবস্টার, ম্যাকরেলসহ নানা জাতের মাছ। পাশাপাশি নদী ও পুকুরের রুই, কাতল, বোয়াল, কই, মাগুর মাছও আনা হয়।
মেসার্স বিমল সূত্রধরের ম্যানেজার শিমুল কান্তি জানান, সামুদ্রিক মাছের সবসময়ই বেশি চাহিদা থাকে এবং তাদের আড়তে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার মাছ বিক্রি হয়। ফিশারি ঘাটের মোট আড়তের সংখ্যা ২২০টি, যেখানে পুরনো বাজার থেকে বহু ব্যবসায়ী এসে এখন নতুন ঘাটেই ব্যবসা করছেন।
নুরজাহান ফিশিংয়ের স্বত্বাধিকারী নুরুল আলম জানান, বর্তমানে সাগরের পরিবেশ খারাপ থাকায় জেলেরা কম যাচ্ছে, ফলে সরবরাহ কমে গিয়ে মাছের দাম কিছুটা বেড়েছে। তবুও দেশের নানা প্রান্ত থেকে পাইকারেরা ট্রাকে করে মাছ নিয়ে যাচ্ছেন, যা স্থানীয় বাজারে সরবরাহ হয়।
হাটহাজারী থেকে আসা ব্যবসায়ী শফিক মিয়া ও পুলিশ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, এখানে তাজা ও মানসম্পন্ন সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যায় এবং শহরের অন্যান্য বাজারের তুলনায় দামও তুলনামূলক কম।
মাছ সংরক্ষণের জন্য ফিশারি ঘাটে গড়ে উঠেছে বরফ ও কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থা। এই ঘাট থেকেই বহু মাছ বিদেশেও রপ্তানি করা হয়। ভোরের প্রথম আলো না ফোটার আগেই যেভাবে এখানকার জীবন থেমে থাকে না, সেটিই যেন চট্টগ্রামের অর্থনীতির এক অনন্য চিত্র তুলে ধরে।