শনিবার
১৯শে এপ্রিল, ২০২৫
৬ই বৈশাখ, ১৪৩২

আমরা জনতার পক্ষে সত্য বলি

ইসলামে শিশুদের অধিকার: একটি বিস্ময়কর দৃষ্টিভঙ্গি

Fresh News রিপোর্ট
নভেম্বর ১৬, ২০২৪
৮:১৮ পূর্বাহ্ণ

ইসলামে শিশুদের অধিকার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মহান আল্লাহ আদম সন্তানকে বিশেষ সম্মান দিয়েছেন এবং তাদের অধিকারও সংরক্ষণ করেছেন। ইসলামে শিশুদের জন্য অনেক অধিকার রয়েছে, যা তাদের সুস্থ, সুখী এবং নৈতিকভাবে সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রথমত, শিশুর বেঁচে থাকার অধিকার ইসলামে স্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত। একসময় কন্যাশিশুদের বেঁচে থাকার অধিকার পর্যন্ত অস্বীকার করা হতো, তবে ইসলাম এসে তাদের এই অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। পবিত্র কোরআনে উল্লেখ রয়েছে, “আর যখন জীবন্ত কবরস্থ কন্যাকে জিজ্ঞাসা করা হবে, কী অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছে?” (সুরা: তাকভীর, আয়াত: ৮-৯)। এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা শিশুহত্যার ভয়াবহতা এবং তার পরিণতির প্রতি সতর্ক করেছেন। তাই প্রত্যেক অভিভাবকের উচিত তাদের সন্তানদের নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা।

দ্বিতীয়ত, জন্মের পর শিশুর অন্যতম অধিকার হলো মায়ের দুধ পানের ব্যবস্থা করা। কোরআনে নির্দেশ রয়েছে, “আর মায়েরা তাদের সন্তানদের পূর্ণ দুই বছর দুধ পান করাবে।” (সুরা: বাকারাহ, আয়াত: ২৩৩)। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মায়ের দুধ শিশুর শারীরিক এবং মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি নানা ধরনের রোগের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে এবং শিশুকে সুস্থ রাখে।

শিশুর নামও তার জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইসলামে একটি ভালো ও অর্থপূর্ণ নাম রাখা শিশুর অধিকার হিসেবে উল্লেখিত হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, পিতার ওপর সন্তানের কিছু অধিকার রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো সুন্দর এবং অর্থপূর্ণ নাম রাখা। নাম একটি শিশুর পরিচয়ের প্রতীক, যা তার ভবিষ্যতের দিকে একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে সহায়তা করে।

শিশুকে ভালোবাসা এবং তার প্রতি স্নেহ প্রদানের মাধ্যমে অভিভাবকরা তাকে আবেগগতভাবে পূর্ণতা দিতে পারেন। হাদিসে এসেছে, নবী (সা.) হাসান (রা.)-কে খুব ভালোবাসতেন এবং একবার তাকে চুমু খেয়ে আল্লাহর কাছে তার ভালোবাসা কামনা করেছিলেন (বুখারি, হাদিস: ২১২২)। তাই শিশুকে ভালোবাসা এবং তার প্রতি স্নেহ প্রদানের মাধ্যমে তার বিকাশে সাহায্য করা একজন অভিভাবকের দায়িত্ব।

দ্বিতীয়ত, ধর্মীয় শিক্ষা প্রদানও একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিকার। ইসলামে সব মুসলমানের ওপর ফরজ, যে তাদের সন্তানদের দ্বিনী শিক্ষা দেবে। কোরআন শিক্ষা, ইবাদত সম্পর্কে জ্ঞান এবং নৈতিক শিক্ষা শিশুদের জীবনের জন্য অপরিহার্য। অভিভাবকদের উচিত সন্তানদের ভালোভাবে গড়ে তোলার জন্য ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা নিশ্চিত করা।

অপরদিকে, শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য খেলাধুলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইমাম গাজালি (রহ.) বলেছেন, “শিশুকে খেলাধুলার সুযোগ না দিলে তার মনোবল দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।” দীর্ঘ সময়ের পড়াশোনার চাপ থেকে মুক্তি পেতে শিশুকে খেলার সুযোগ দেওয়া দরকার। এটি তাকে শারীরিকভাবে সুস্থ রাখার পাশাপাশি মানসিকভাবে সতেজ রাখে।

এই সব অধিকার সঠিকভাবে পালন করলে, শিশু একদিকে যেমন শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকে, তেমনি তাদের জীবনের প্রতি মূল্যবান দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়, যা ভবিষ্যতে তাদের ভালো মানুষ হয়ে ওঠার পথ প্রশস্ত করে।