জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি দলকে সঙ্গে নিয়ে মতবিনিময় সভা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এই সভায় তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “তোমরা অসম্ভবকে সম্ভব করেছো, এক বিজয় অর্জন করেছো, আরেক বিজয় আসবে।”
সভায় তিনি শিক্ষার্থীদের রাষ্ট্রের অভিভাবক আখ্যা দিয়ে আরও বলেন, “তোমাদের কারণেই রাষ্ট্র। এই ভূমিকা ভুলে যেও না। নিজের ভূমিকা ভুলে যেও না।” তিনি মনে করিয়ে দেন, যারা আজ এখানে নেই, তারা অবশ্যই রাষ্ট্রের অভিভাবক। তাদের দায়িত্বও রাষ্ট্রের সঠিক পথচলায় সহায়ক হওয়া।
এই সভায় শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, নিহতদের রাষ্ট্রীয় খেতাব দেওয়া, আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং জুলাই গণহত্যায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান। তারা আরও উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে, গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “দ্রব্যমূল্য ঠিক রাখতে হবে। আমরা সিন্ডিকেটের জন্য কোনো ধরনের ব্যাখ্যা চাই না। আমরা চেষ্টা করছি দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে এবং রমজানেও এর স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে।”
স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা চাই স্থানীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া হোক। দুর্নীতির হাত থেকে সরকার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠা করবে।”
জুলাইয়ের শহীদদের রাষ্ট্রীয় সম্মান এবং খেতাবের বিষয়ে ড. ইউনূস জানান, “আমরা তাদের অবদান ভুলব না এবং যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান করব।” শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে, আমরা তরুণদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলব।”
বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের আবাসনের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পরামর্শ শোনার পর তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়ছে, যা অত্যন্ত আনন্দের বিষয়।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, “গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করবে, আমরা এই নীতিতে থাকব। তবে কিছুটা মনোক্ষুণ্ণ হওয়া স্বাভাবিক, কারণ সরকারের কাজ জনগণের কাছে পৌঁছাচ্ছে না।”
শেষে শিক্ষার্থীদের প্রতি তিনি বলেন, “দেশের মানুষ ছাত্রদের ওপর ভরসা করে। এই বিশ্বাস ধরে রাখো। এক বিজয় অর্জন করেছো, আরেক বিজয় আসবে।”