মাইলেজ সুবিধা এবং পেনশন দাবিতে কোনো সমাধান না হওয়ায় আগামী ১ জানুয়ারি থেকে আট ঘণ্টার বেশি কাজ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের লোকোমাস্টাররা। এতে লোকোমাস্টার সংকটে দেশের বিভিন্ন রুটে ট্রেন চলাচলে বিলম্ব হবে, যা যাত্রীদের জন্য ভোগান্তি ডেকে আনবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান জানিয়েছেন, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের দাবিগুলো পূরণ না হলে কর্মঘণ্টার সীমাবদ্ধতায় ফিরে যাবেন রানিং স্টাফরা। তিনি বলেন, “আমরা বহুবার আবেদন করেছি, চিঠি দিয়েছি, কিন্তু কোনো সাড়া পাইনি। তাই এবার আমরা আট ঘণ্টার বেশি কাজ করব না। রেলের লোকোমাস্টার, সহকারী লোকোমাস্টার এবং সাব-লোকোমাস্টাররা এই সিদ্ধান্তে একমত হয়েছেন।”
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, আইন অনুযায়ী ট্রেনে আট ঘণ্টার দায়িত্ব পালনের পর ১২ ঘণ্টার বিশ্রাম পাওয়া রানিং স্টাফদের অধিকার। কিন্তু কর্মী সংকটের কারণে তাদের ৫-৬ ঘণ্টা বিশ্রামের পর আবার কাজে নামানো হয়। মাইলেজ সুবিধা বাতিল এবং তা পুনর্বহালের দাবিতে গত তিন বছর ধরে আন্দোলন করে আসছেন রানিং স্টাফরা।
২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় রেল মন্ত্রণালয়কে মাইলেজ সুবিধা সীমিত করতে চিঠি দেয়। এতে আনলিমিটেড মাইলেজ সুবিধা বাতিল এবং সর্বোচ্চ ৩০ কর্মদিবসের সমপরিমাণ সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়। এছাড়া রানিং স্টাফদের পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা থেকে মাইলেজ বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। এ সিদ্ধান্তের পর থেকেই রানিং স্টাফরা ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলনে নামে।
রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন জানিয়েছেন, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নবনিযুক্ত রানিং স্টাফদের শর্ত বাতিল এবং বকেয়া মাইলেজ পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এছাড়া বিভাগীয় পদোন্নতিপ্রাপ্ত স্টাফদের বেতন ভাতা নিয়মিত করার ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। তবে মাইলেজ ও পেনশনের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
রানিং স্টাফরা বলেছেন, “১৬০ বছর ধরে চলা নিয়ম হঠাৎ করে বাতিল করা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। রেলের স্বার্থে আমরা অতিরিক্ত কাজ করেছি, কিন্তু এবার আমাদের অধিকার আদায়ের লড়াই থেকে সরে আসার সুযোগ নেই।”
রেলওয়ের এই সংকটের কারণে যাত্রীরা নতুন বছরের শুরুতেই বড় ধরনের ভোগান্তির শিকার হতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
