মিয়ানমারের চলমান সংকট নিয়ে সম্প্রতি ব্যাংককে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে একমাত্র বাংলাদেশই কথা বলেছে। ১৯ ডিসেম্বরের এই বৈঠকে অংশ নেয় মিয়ানমার, বাংলাদেশ, চীন, ভারত, লাওস এবং থাইল্যান্ডের প্রতিনিধিরা। তবে, বৈঠকে বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশ রোহিঙ্গা বিষয়ে একটি শব্দও খরচ করেনি। এমনকি চীন ও ভারতের মতো বন্ধু রাষ্ট্রও এই বিষয়ে কিছু বলেনি, যা ঢাকা জন্য ছিল এক বিস্ময়ের বিষয়।
বৈঠকটি থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিস সাঙ্গিয়াম্পংসার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, মিয়ানমারের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী উ-থান সোয়ে, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি, চীনের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মা ঝাউজু এবং লাওসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেলুয়েমেস্কেই কোমাসিথ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকার এক কূটনীতিক সূত্র জানায়, বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যু তুলে ধরার একমাত্র দেশ ছিল বাংলাদেশ। অন্য কোনো দেশই রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কথা বলেনি। বৈঠকে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো মূলত মিয়ানমারের স্থিতিশীলতা, ভবিষ্যত রাজনীতি এবং সীমান্ত সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান না হলে মিয়ানমারে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় বলে স্পষ্ট অবস্থান নেয়।
এছাড়া, ব্যাংককে বৈঠকের আগে চীন রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে তার সমর্থন এবং মিয়ানমারের সংকটের প্রতি আন্তরিকতার প্রতিশ্রুতি দেয়। ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করে এবং আশ্বস্ত করে যে চীন ব্যাংককে বৈঠকে এই ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। তবে, বৈঠকে চীন বা অন্য কোনো দেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে কোনো উল্লেখ করেনি।
ভারতের প্রসঙ্গেও ঢাকা কিছুটা বিস্মিত। যদিও ভারতের সঙ্গে শেখ হাসিনা সরকারের সম্পর্কের ‘সোনালী অধ্যায়’ গড়েছিল, তবে রোহিঙ্গা ইস্যুতে দিল্লির আন্তরিকতা নিয়ে কিছুটা সন্দেহ রয়েছে। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তন এবং পরবর্তীতে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের অবনতির পর, ভারতের পক্ষ থেকেও ব্যাংককে রোহিঙ্গা নিয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
ব্যাংকক থেকে ফিরে ২২ ডিসেম্বর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, “বাকি দেশগুলোর উদ্বেগ রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে ততটা ছিল না, বরং তারা অন্য ইস্যু নিয়ে বেশি আলোচনা করেছে। তবে আমি স্পষ্টভাবে বলেছি, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান না হলে যে শান্তি বা স্থিতিশীলতার কথা ভাবছেন, তা কখনোই সম্ভব নয়।”
এছাড়া, মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে তৌহিদ হোসেন বলেন, “মিয়ানমারের সীমান্তে এখন ‘নন-স্টেট অ্যাক্টর’ (রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি – আরাকার আর্মি) কার্যক্রম চালাচ্ছে, যা পুরোপুরি তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। মিয়ানমারকে আমাদের পরামর্শ হচ্ছে, তাদেরকে যথাযথ পদ্ধতিতে এই সমস্যা সমাধান করতে হবে।”
এ বৈঠক বাংলাদেশের কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া এবং রোহিঙ্গা সমস্যার গুরুত্বের প্রতি অব্যাহত আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করার প্রয়াস হিসেবে দেখা হচ্ছে।