বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সম্প্রতি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, ছোট বোন শেখ রেহানা এবং রেহানার মেয়ে, ব্রিটিশ মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক লেনদেনের যাবতীয় নথি তলব করেছে। দুদক, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং অন্যান্য সংস্থার মাধ্যমে এই অনুসন্ধান চালাচ্ছে, যার মধ্যে অফশোর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর লেনদেনের বিস্তারিত বিবরণ চাওয়া হয়েছে।
২৪ ডিসেম্বর, দুদক চিঠি দিয়ে বিএফআইইউ এবং নির্বাচনী কমিশন, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অফিসকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের লেনদেন ও নথি সরবরাহের জন্য নির্দেশনা দেয়। দুদকের অনুসন্ধান টিম ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং অন্যান্য প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে। এই অনুসন্ধানের আওতায় শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, ছোট বোন শেখ রেহানা, এবং রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে।
দুদক জানায়, অনুসন্ধানে উঠে এসেছে যে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত মোট ৮০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকল্পে ৫০০ কোটি ডলার বা প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের সন্দেহ রয়েছে। সেই সঙ্গে টিউলিপ সিদ্দিক ও তার পরিবারের সদস্যরা এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক একটি পাঁচ সদস্যের টিম গঠন করেছে, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন। অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে আছেন সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া, এসএম রাশেদুল হাসান, মো. সাইদুজ্জামান এবং একেএম মর্তুজা আলী সাগর।
এছাড়া, শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগও অনুসন্ধান করা হচ্ছে। ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) সজীব ওয়াজেদ জয়ের হংকং ও কেম্যান আইল্যান্ডে থাকা ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যাংকে টাকা পাচারের বিষয়ে তদন্ত শুরু করে। একাধিক আন্তর্জাতিক ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে এ অর্থ পাচারের প্রমাণ মিলেছে।
গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পোরেশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজের সময় মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংক ব্যবহার করে শেখ হাসিনাকে ৫০০ কোটি ডলার আত্মসাতের সুযোগ দেওয়া হয়। টিউলিপ সিদ্দিক এবং তার পরিবারের সদস্যরা এই পাচারে ভূমিকা পালন করেছেন। প্রতিবেদনটি দাবি করেছে, রাশিয়ার সহযোগিতায় এই প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি ঘটেছে, যার মধ্যে অস্ত্র চুক্তি সম্পর্কিত মধ্যস্থতাও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
২২ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যে টিউলিপ সিদ্দিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ব্রিটেনের মন্ত্রিপরিষদ অফিসের ন্যায় ও নৈতিকতা দল তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, যাতে তার বিদেশি লেনদেন এবং অন্যান্য আর্থিক কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত জানা যায়।
এদিকে, বিভিন্ন দেশে দুর্নীতি অনুসন্ধানকারী প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে লেনদেনের তথ্য সংগ্রহ করছে, যা ভবিষ্যতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা বা তদন্তের একটি বড় প্রমাণ হতে পারে।
এফবিআইসহ আন্তর্জাতিক তদন্ত সংস্থাগুলোর পাশাপাশি, দুদক ও অন্যান্য সংস্থাগুলি শিগগিরই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং অন্যান্য প্রকল্পগুলোর লেনদেনের নথি সংগ্রহ করবে এবং যেসব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট, তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করবে।
এই অনুসন্ধানগুলি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যার মাধ্যমে সরকার ও দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে।