মঙ্গলবার
২২শে এপ্রিল, ২০২৫
৯ই বৈশাখ, ১৪৩২

আমরা জনতার পক্ষে সত্য বলি

দেশে এখনো ভোটাধিকার থেকে জনগণ বঞ্চিত, চলছে দুর্নীতি

Fresh News রিপোর্ট
মার্চ ২৫, ২০২৫
১:২৮ অপরাহ্ণ

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য ছিল একটি ন্যায়ভিত্তিক, বৈষম্যহীন সমাজ গঠন, যেখানে থাকবে আইনের শাসন ও মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিতকরণ। কিন্তু স্বাধীনতার এত বছর পরেও সে সমাজ গঠন সম্ভব হয়নি। বরং দেশে এখনো ভোটাধিকার থেকে জনগণ বঞ্চিত, চলছে দুর্নীতি, লুটপাট এবং গুম-খুনের মাধ্যমে একটি ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা কায়েম করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন মুক্তিযুদ্ধের সব শহিদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাকে। তিনি বলেন, জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানে শহিদ ও আহতদের আত্মত্যাগের কারণেই আজ আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতে পারছি এবং এই সুযোগ কোনোমতেই বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না।

অনুষ্ঠানে তিনি মরণোত্তর পুরস্কারের পরিবর্তে জীবদ্দশায় গুণীজনদের সম্মান জানানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। ইউনূস বলেন, “যখন কাউকে আমরা সম্মান জানাই, অথচ তিনি আর আমাদের মাঝে নেই—তখন সেটা কেবল সম্মান নয়, এক ধরনের অপরাধবোধও থেকে যায়। জাতি হিসেবে অকৃতজ্ঞ না হতে চাইলে আমাদের উচিত জীবিত অবস্থায় তাঁদের মূল্যায়ন করা।”

এবারের স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তদের স্মরণ করে তিনি বলেন, অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম ছিলেন একজন বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী, যিনি সর্বদা মানবকল্যাণে নিয়োজিত ছিলেন। কবি আল মাহমুদ বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য উচ্চতা ছুঁয়েছেন, যাঁর কবিতা বহু মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে। ফজলে হাসান আবেদ ব্র্যাক গঠন করে বাংলাদেশে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য যে অবদান রেখে গেছেন, তা বিশ্বের জন্য এক উদাহরণ।

তিনি আরও বলেন, লেখক ও চিন্তাবিদ বদরুদ্দীন উমরের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে পথ দেখাবে। ভাস্কর নভেরা আহমেদ ও সঙ্গীতশিল্পী আজম খান ছিলেন বাংলার শিল্প-সংস্কৃতির দুই উজ্জ্বল নক্ষত্র। আর গণআন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠা আবরার ফাহাদ শহিদ হয়েছেন ন্যায়ের পক্ষে কথা বলায়—তাঁর আত্মত্যাগ নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতার মূল্য শেখাবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আজকের পুরস্কারপ্রাপ্তরা কেউই জীবিত অবস্থায় এই স্বীকৃতি দেখে যেতে পারেননি, যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। তবুও তাঁদের অবদান চিরকাল জাতির হৃদয়ে গেঁথে থাকবে। দেরিতে হলেও তাঁদের সম্মান জানাতে পেরে জাতি গর্বিত। তাঁদের কর্ম, আদর্শ এবং ত্যাগ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে বলে উল্লেখ করেন ড. ইউনূস।