প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার বাস্তবায়নে পোস্টাল ব্যালট, অনলাইন এবং প্রক্সি—এই তিন পদ্ধতির সমন্বয়ে একটি মিশ্র ব্যবস্থা গড়তে চায় নির্বাচন কমিশন। এজন্য একটি বিশেষজ্ঞ টিম গঠন করে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
বুধবার (৯ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান তিনি। বলেন, বিশ্বের ১১৫টি দেশ প্রবাসীদের ভোটাধিকার দিয়েছে, বাংলাদেশও সে পথে এগোচ্ছে। তবে বাংলাদেশের প্রবাসীদের বিস্তৃতি এতটাই ব্যাপক যে, একক কোনো পদ্ধতি কার্যকর করা সম্ভব নয়। তাই মিশ্র পদ্ধতিই গ্রহণযোগ্য সমাধান হতে পারে।
তিনি বলেন, “প্রবাসীদের ভোট দিতে হলে সবার আগে অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে। এরপর যে দেশে যেই পদ্ধতি বাস্তবায়নযোগ্য, সেখানে সেটি প্রয়োগ করব। একেক দেশে একেক বাস্তবতা—কোথাও দূতাবাসে ভোট দেওয়া যাবে, কোথাও পোস্টাল ব্যালট কার্যকর হবে, আবার কোথাও প্রক্সি ভোট হতে পারে। এজন্য একটি কম্বাইন সিস্টেমের প্রয়োজন।”
গতকাল (৮ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, এমআইএসটি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সংস্থার বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন। সেখানে উপস্থাপিত ১০টি প্রেজেন্টেশনের মধ্যে তিনটি পদ্ধতির সুবিধা-অসুবিধা বিশ্লেষণ করা হয়।
ইসি সানাউল্লাহ জানান, এই তিনটি পদ্ধতির কার্যকারিতা যাচাই করে দুর্বলতা দূর করার লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি অ্যাডভাইজরি টিম গঠন করা হবে। তারা পরামর্শ দেবেন কোন পদ্ধতি কীভাবে বাস্তবায়নযোগ্য হবে এবং কীভাবে সীমাবদ্ধতা দূর করা সম্ভব।
তিনি বলেন, “আমরা যা-ই করি, আগে মক টেস্ট করতে হবে। সম্ভবত সব পদ্ধতিই পরীক্ষামূলকভাবে সীমিত পরিসরে প্রয়োগ করতে হবে। পৃথিবীর অনেক দেশ এমনটাই করছে। আমরা আগে জাতীয় নির্বাচনে এটি চালু করব। পরে স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে ভাবা যাবে।”
প্রক্সি ভোট নিয়ে তিনি বলেন, “যদি অনেক প্রবাসীকে ভোটের আওতায় আনতে চাই, তাহলে প্রক্সি হতে পারে একমাত্র উপায়। যদিও এটি বিতর্কিত একটি পদ্ধতি, তবুও এটি বিশ্বের প্রায় ২৫টি দেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করছে। তবে আমাদের কাছে একমাত্র পদ্ধতি নয়—বরং তিনটিরই যৌক্তিক প্রয়োগ দেখতে হবে।”
তিনি আরও জানান, “যে দেশে যে পদ্ধতিটি বাস্তবায়নযোগ্য, সেই দেশ অনুযায়ী আমরা পদ্ধতি কাস্টমাইজ করব। তবে কোনোভাবেই এমন কোনো ব্যবস্থা চালু করা হবে না, যাতে প্রবাসীরা বিভ্রান্ত হন বা হোঁচট খান। সেজন্য সঠিক সময়ের মধ্যেই সবকিছু সম্পন্ন করার চেষ্টা চলছে।”
শেষে তিনি বলেন, “আমরা কোনো মতামতকে চাপিয়ে দেইনি। সকল বিশেষজ্ঞকে স্বাধীনভাবে মত দেওয়ার সুযোগ দিয়েছি। আমাদের লক্ষ্য হলো সময়মতো কার্যকর একটি সিস্টেম তৈরি করা, যাতে অন্তত জাতীয় নির্বাচনে প্রবাসীরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন।”