জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান জানিয়েছেন, দেশে বর্তমানে ১ কোটি ৪৫ লাখের বেশি ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন)ধারী থাকলেও আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছেন মাত্র ৪৫ লাখ জন। এই অস্বাভাবিক ব্যবধান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনে অবসরপ্রাপ্ত কর কর্মকর্তাদের সংগঠন ‘রিটায়ার্ড ট্যাক্স অফিসারস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
চেয়ারম্যান বলেন, “রিটার্ন না দিলেও কোনো সমস্যা হয় না—এই ধারণা যেন প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। কারণ কারও জবাবদিহিতা নেই, কেউ নোটিশ দেয় না, কোনো অ্যাসেসমেন্ট হয় না। আমি কমিশনারদের জিজ্ঞেস করি, আপনারা কেন নোটিশ করছেন না?”
তিনি জানান, বর্তমানে অনলাইনে জমা পড়া প্রায় ১৫ লাখ রিটার্নের মধ্যে ১০ লাখই শূন্য রিটার্ন। কাগজে জমা পড়া রিটার্নেও একই প্রবণতা রয়েছে। অথচ ২০১৪ সালে টিআইএনধারীর সংখ্যা ছিল ১৫ লাখের নিচে, যা বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ কোটি ১৪ লাখে। গত ১০ বছরে যুক্ত হয়েছে ১ কোটির বেশি নতুন টিআইএনধারী।
চেয়ারম্যান বলেন, “আমরা আগে রাজস্ব আদায়ে অনেকটা কাগুজে লক্ষ্যের ওপর নির্ভর করতাম। বাস্তবে মাঠপর্যায়ে তেমন কার্যক্রম ছিল না। কিন্তু এখন সেই পরিস্থিতি বদলাতে হবে।”
তিনি জানান, আগামী ১ জুলাই থেকে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হবে। এখন প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার রিটার্ন জমা পড়ছে, এবং নতুন করদাতারা নিবন্ধন করছেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে এনবিআরের সাবেক সদস্য আমিনুর রহমান ও অপূর্ব কান্তি দাস বাড়িভাড়া আয় পরিগণনার পদ্ধতি সহজ করা এবং এলাকাভিত্তিক কর স্ল্যাব সংস্কারের প্রস্তাব দেন। উত্তরে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “ঢাকায় যারা বেশি আয় করেন, তাদের খরচও বেশি। করের হার উল্টোভাবে নির্ধারণের চিন্তা আমরা করছি।”
এদিকে প্রাক-বাজেট আলোচনায় রিটায়ার্ড ট্যাক্স অফিসারস অ্যাসোসিয়েশন এনজিও, সমবায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানকে কর অব্যাহতির আওতায় আনার প্রস্তাব দিয়েছে। পাশাপাশি আয়কর আইনের নানা ধারায় সংশোধনেরও সুপারিশ করেছে তারা।
চেয়ারম্যান জানান, এনবিআর এখন থেকে শুধু নীতিমালা নির্ধারণে নয়, বাস্তবায়নেও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে চায়। তিনি বলেন, “রাজস্ব আহরণে জবাবদিহিতা ও কার্যকর ব্যবস্থা ছাড়া কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব নয়।”