সোমবার
২১শে এপ্রিল, ২০২৫
৮ই বৈশাখ, ১৪৩২

আমরা জনতার পক্ষে সত্য বলি

চুনতির জাঙ্গালিয়া: মৃত্যুর ফাঁদে পরিণত মহাসড়কের বিপজ্জনক বাঁক

Fresh News রিপোর্ট
এপ্রিল ৩, ২০২৫
১১:৪৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়ার চুনতির জাঙ্গালিয়া যেন মৃত্যুর ফাঁদে পরিণত হয়েছে। ঈদের মাত্র তিন দিনে এই সড়কে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৫ জন। একের পর এক দুর্ঘটনায় এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ, প্রশাসন উদ্বিগ্ন এবং রাজনৈতিক দলগুলো রাস্তায় নামার ঘোষণা দিয়েছে।

বিপজ্জনক বাঁক, সরু রাস্তা, লবণের পানি পড়ে সড়কের পিচ্ছিলতা—এগুলোকে প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন প্রশাসন ও সড়ক ব্যবহারকারীরা। তবে স্থানীয়দের মধ্যে কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, এখানে অতিপ্রাকৃতিক কোনো শক্তি কাজ করছে। অনেকে বলেন, চালকরা জাঙ্গালিয়া পৌঁছেই একাধিক রাস্তা দেখতে পান, ফলে তারা বিভ্রান্ত হয়ে যান।

এই বিশ্বাস একেবারে উড়িয়ে না দিলেও লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইনামুল হাছান বলেন, মূল কারণ হলো বিপজ্জনক বাঁক ও রাস্তার অবস্থা। সড়ক সরু, উঁচু-নিচু এবং লবণের গাড়ি থেকে পড়া পানি পিচ্ছিলতা সৃষ্টি করে। বাইরের এলাকার চালকরা এসব পরিস্থিতি অনভ্যস্ত হওয়ায় দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে।

তিন দিনে তিনটি বড় দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান সরকারের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম (বীর প্রতীক), চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমসহ সংশ্লিষ্টরা। সঙ্গে বিএনপি ও জামায়াতের নেতারাও সেখানে গিয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ইতোমধ্যে জাঙ্গালিয়ায় গতিরোধক স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে এবং সড়ক চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প গ্রহণের কথা জানানো হয়েছে।

স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবির পরও সড়ক প্রশস্ত না হওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ। অনেকে জানান, জাঙ্গালিয়া ছাড়াও পুরো মহাসড়কেই ভয়ংকর বাঁক ও সংকীর্ণতা রয়েছে। ব্যাংকার মোহাম্মদ আবদুল জলিল বলেন, শুধু চার লেন নয়, লবণবাহী গাড়ির নিয়ন্ত্রণও দরকার। কারণ রাত থেকে ভোর পর্যন্ত লবণের গাড়িগুলো রাস্তা ভিজিয়ে দেয়।

দোহাজারী হাইওয়ে থানার এসআই আবদুল মতিন বলেন, দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা চালকেরা এই রাস্তার বাঁক ও বিপজ্জনক এলাকা সম্পর্কে জানেন না। এছাড়া যথাযথ সিগন্যাল ও সতর্কীকরণ চিহ্নের অভাবও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।

বিপর্যয়ের প্রতিবাদে মাঠে নামছে রাজনৈতিক দলগুলো। বিএনপি, জামায়াত ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা মানববন্ধন ও হরতালের হুমকি দিয়েছেন। সাবেক চেয়ারম্যান ও আইনজীবী ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, প্রকল্পের বাস্তবায়ন না হলে আমরা হরতাল দিতে বাধ্য হবো।

সড়ক দুর্ঘটনার সর্বশেষ মর্মান্তিক ঘটনায় চুনতির জাঙ্গালিয়ায় নিহত ১০ জনের পরিচয় মিলেছে। তারা হলেন ঝিনাইদহ ও ঢাকার বিভিন্ন পরিবারের সদস্যরা, যাঁরা পরিবারের ঈদের আনন্দ শেষে প্রাণ হারিয়েছেন সড়কের মৃত্যুফাঁদে।

এই মহাসড়ককে নিরাপদ করতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে, আরও কত প্রাণ যাবে—সেই প্রশ্নই এখন জোরালো হয়ে উঠেছে স্থানীয়দের কণ্ঠে।