বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘গত ১৫ বছরে অস্ত্রের জোরে যারা ক্ষমতা দখল করে রেখেছিল, তারা দেশটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি—সব ক্ষেত্রেই নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে। এখন রাষ্ট্র মেরামত করা জরুরি।’ বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেলে কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক কর্মশালায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘বর্তমানে যারা সংস্কারের কথা বলছেন, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। বিএনপির বাইরেও কেউ যদি সংস্কারের কথা বলেন, তাকেও স্বাগত জানানো উচিত। আমরা অনেক আগেই, এমনকি ২০১৭ সালে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ভিশন ২০৩০-এর মাধ্যমে এই সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। বিএনপি সব সময় দেশ ও জনগণের কল্যাণের কথা চিন্তা করে, এটি আবারও প্রমাণিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দুই বছর আগেই জানতাম, স্বৈরাচারের পতন হবে। সেই বিশ্বাস থেকেই ৩১ দফা উপস্থাপন করেছি, কারণ দেশ পুনর্গঠন করতে হবে। স্বৈরাচার দেশটাকে ধ্বংস করেছে, এখন এটিকে মেরামত করা জরুরি। বর্তমান সরকার যে কমিশন গঠন করেছে, সেটির রিপোর্টেও আমাদের ৩১ দফার বিষয়গুলো উঠে এসেছে। যদিও তারা কিছুটা এদিক-ওদিক বলার চেষ্টা করছে, কিন্তু মূল বিষয়ে তারা আমাদের কথার বাইরে যেতে পারেনি। বিএনপিই একমাত্র দল যারা দেশ নিয়ে সত্যিকারের ভাবে।’
তারেক রহমান আরও বলেন, ‘দেশের জনগণ বিশ্বাস করে, ভালো কিছু সম্ভব হলে সেটি বিএনপির হাত ধরেই সম্ভব। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা আমাদের দায়িত্ব। কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, দ্রব্যমূল্যসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আমরা কথা বলছি, কারণ এগুলো জনগণের প্রকৃত সমস্যা।’
তিনি বলেন, ‘৩৫ বছরের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় আমি বুঝেছি, দেশে জবাবদিহিতা ও সুষ্ঠু নির্বাচনী ব্যবস্থা না থাকলে কোনো সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। নির্বাচনী ব্যবস্থাকে স্থায়ী ও নিরপেক্ষ করতে হবে, যেন নির্ধারিত সময়ে ঝড়-বৃষ্টি বা যে কোনো প্রতিকূলতা থাকলেও নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়। প্রকৃত জনপ্রতিনিধি থাকলে জনগণের সমস্যার সমাধান স্বয়ংক্রিয়ভাবে হবে। এজন্য আমাদের জনগণের প্রতি জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।’
তারেক রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘গত ১৫ বছরে বিএনপির বহু নেতাকর্মী গুম, খুন, হত্যা, মিথ্যা মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য ধ্বংস করা হয়েছে, মানুষের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে, যাতে জনগণের কথা বলা যায় ও তাদের সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া যায়।’
তিনি বলেন, ‘জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে হবে, যাতে তারা প্রকৃত নেতৃত্ব বাছাই করতে পারে। একটি অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে হবে, যেখানে জনগণ নিজের প্রতিনিধি নিজের ইচ্ছায় নির্বাচন করতে পারবে। ৩১ দফা কোনো দলের জন্য নয়, এটি দেশের জনগণের জন্য। বিএনপি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে জনগণের মৌলিক সমস্যার সমাধান ও রাষ্ট্র মেরামতের দায়িত্ব নেবে। আমরা যে প্রতিশ্রুতি জনগণকে দিয়েছি, তা বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুত আছি। যদি কেউ আমাদের পথভ্রষ্ট করতে চায়, তবে তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।’
কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুতুব উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের আহ্বায়ক ড. মোরশেদ হাসান খান, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য ব্যারিস্টার মীর মো. হেলাল উদ্দিন, মো. আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, মিডিয়া সেলের সদস্য ও প্রশিক্ষক ফারজানা শারমিন পুতুল, ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলসহ বিএনপির নেতৃবৃন্দ।