মঙ্গলবার
৪ঠা মার্চ, ২০২৫
১৯শে ফাল্গুন, ১৪৩১

আমরা জনতার পক্ষে সত্য বলি

এক হাতে ইনহেলার, অন্য হাতে খুন্তি

Fresh News রিপোর্ট
মার্চ ৪, ২০২৫
৩:০৪ অপরাহ্ণ

 

৬৫ বছর বয়সী শাহিন আকন, যিনি শহরের বড় মসজিদ মোড়ে বাদাম বিক্রি করে সংসার চালান, শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও প্রতিদিন কাজ করতে বাধ্য হন। তাঁর জীবনযাপন ও সংগ্রাম অনেকের জন্য এক সাহসিকতার গল্প।

শাহিন আকনের বাড়ি পিরোজপুর পৌর শহরের উত্তর নামাজপুর গ্রামে। ২০০০ সালে তিনি শহরের বড় মসজিদ মোড়ে বাদাম ভেজে বিক্রি শুরু করেন। ২৪ বছর ধরে এখানেই তিনি তার জীবনযাপন করছেন। এক ছেলে ও দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন এবং তার ছেলে রিকশা চালিয়ে কোনোরকমে সংসার চালায়।

মঙ্গলবার (৩ মার্চ) সন্ধ্যায় শহরের বড় মসজিদ মোড়ে ভ্রাম্যমাণ ভ্যানগাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে শাহিন আকন জানান, ২০০০ সালে নিজের এক কাঠা জমির ওপর ধার-দেনা করে ঘর তৈরি করেছিলেন। তবে ঘূর্ণিঝড় রেমালে সেই ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কোনো সাহায্যও পাননি তিনি। এরপর দুটি এনজিও থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ঘরটি মেরামত করেন। এখন সেই ঋণের বোঝা তাঁর জন্য দুঃখজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সপ্তাহে ৩ হাজার টাকা কিস্তি দিতে হয়, যা অনেকটা চাপ হয়ে এসেছে।

শাহিন প্রতিদিন গড়ে ৮ কেজি বাদাম বিক্রি করেন। বাদাম কেনার জন্য তিনি উপজেলা সদর বাজার থেকে ১৫০-১৬০ টাকা কেজি দরে বাদাম কিনে, সেগুলো ভেজে বিক্রি করেন। তিনি ছোট প্যাকেটে ১০ টাকা, বড় প্যাকেটে ২০ টাকা এবং ১০০ গ্রামের প্যাকেটে ৩০ টাকা দামে বাদাম বিক্রি করেন। প্রতিদিন ৪০০-৫০০ টাকা লাভ করেন, কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার কারণে কিংবা অসুস্থতা কারণে মাঝে মাঝে কাজ করতে পারেন না।

রামজান মাসে বাদাম বিক্রি কিছুটা কমে গেলেও ইফতারের পর বিক্রি হয়। শাহিন বলেন, “বাদাম বেচে সংসার চলে না, তবে এভাবেই চলতে হচ্ছে।” তাঁর অবস্থা খুবই খারাপ, শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং শ্বাসকষ্ট কমাতে ইনহেলার তার নিত্য সঙ্গী।

নূর উদ্দিন নামে এক ক্রেতা বলেন, “১৫ থেকে ২০ বছর ধরে এখানে বাদাম কিনে খাচ্ছি। শাহিন চাচার জন্য সমাজের বিত্তবানরা যদি এগিয়ে আসে, তাহলে তিনি চিকিৎসা করাতে সক্ষম হবেন।”

এদিকে, পিরোজপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামুনুর রশীদ জানিয়েছেন, শাহিন আকনের চিকিৎসা এবং সহায়তার জন্য প্রশাসন থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।