পহেলা বৈশাখ সামনে রেখে নড়াইলের গ্রামবাংলায় যেন নতুন প্রাণের স্পন্দন। জেলার বিভিন্ন মেলায় মাটির সামগ্রীর চাহিদা থাকায় কর্মব্যস্ত হয়ে উঠেছেন স্থানীয় মৃৎশিল্পীরা। কেউ তৈরি করছেন বাহারি সব পুতুল, কেউ বা মাটির হাঁড়ি-পাতিল, পাখি কিংবা হাতি-ঘোড়া। তবে এই আনন্দের মাঝে রয়েছে কষ্ট আর টিকে থাকার লড়াই।
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) বিকেলে সদর উপজেলার চন্ডিবরপুর ইউনিয়নের রতডাঙ্গা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, অর্চনা রানী পাল কাঠের পিঁড়িতে বসে নিপুণ হাতে গড়া মাটির খেলনায় দিচ্ছেন রঙের ছোঁয়া। জানালেন, “বৈশাখ এলেই ব্যস্ততা বাড়ে। তবে এঁটেল মাটির অভাব আর রঙের দাম বাড়ায় কাজ চালাতে কষ্ট হয়। দাম তুলনামূলক কম—২০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হয় এসব সামগ্রী।”
মৃৎশিল্পী রাজকুমার পাল বলেন, “বছরের এ সময়টাতেই একটু আয়-রোজগারের সুযোগ মেলে। সারা বছর প্লাস্টিকের জিনিসের ভিড়ে আমাদের জিনিসের কদর থাকে না।” আরেক শিল্পী তারেক পাল বলেন, “বাপ-দাদার পেশা ধরে রেখেছি। কিন্তু মানুষ এখন মাটির চেয়ে প্লাস্টিকের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। আগ্রহ হারাচ্ছে নতুন প্রজন্ম।”
ক্ষোভ প্রকাশ করে জগদীশ পাল বলেন, “এই শিল্প আর আগের মতো নেই। ছেলেমেয়েদের আর এতে আনতে চাই না। মেলামাইনের রঙচঙে চমকে মানুষ মাটির জিনিস ভুলে যাচ্ছে।”
তবে হতাশার মাঝেও আশার কথা শোনান নড়াইল জেলা বিসিক কার্যালয়ের উপ-ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. সোলায়মান হোসেন। বলেন, “মৃৎশিল্প বাঙালির ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর নান্দনিকতা ও প্রয়োজনীয়তা দুটোই রয়েছে। এই শিল্প টিকিয়ে রাখতে বিসিক সব ধরনের সহায়তা দেবে।”
চৈত্রের শেষভাগ আর বৈশাখের আগমনে উৎসবের রঙ মেখেছে নড়াইলের মাটিতে। সেই মাটির ছোঁয়ায় গড়া খেলনায় হাসি ফুটুক শিশু মুখে—এটাই প্রত্যাশা শিল্পীদের।