১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ, বাঁশের লাঠি, বল্লম, দা-কুড়াল ও তীর-ধনুক নিয়ে রংপুর ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও করেছিলেন হাজারো নিরস্ত্র বাঙালি। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে এটি ছিল সাহসিকতা ও আত্মত্যাগের এক অবিস্মরণীয় দিন। অথচ স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও দিনটি পায়নি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাষ্যমতে, সেদিন ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাওয়ের ডাক আসে ঢোল পিটিয়ে। আদিবাসী সাঁওতালদেরও অগ্রণী অংশগ্রহণ ছিল। হাজার হাজার মানুষ যখন এগিয়ে যাচ্ছিল ক্যান্টনমেন্টের দিকে, তখন পাকিস্তানি সেনারা চালায় নির্বিচার গুলি। মাত্র ৫ মিনিটেই স্তব্ধ হয়ে যায় গোটা এলাকা। শত শত মানুষ শহীদ হন, মরদেহগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়।
স্মৃতিচারণে বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবর রহমান বলেন, “আমরা নিরস্ত্র ছিলাম, কিন্তু সাহস ছিল পাহাড়সম। সাঁওতালদের তীর ছুটেছে হানাদারদের দিকে, আমরা ছুটেছি লাঠি-কুড়াল হাতে। গুলি চলেছে, মানুষ লুটিয়ে পড়েছে, তারপরও কেউ পিছু হটেনি।”
প্রত্যক্ষদর্শী মেজর নাসির উদ্দিন তার বইয়ে উল্লেখ করেন, কীভাবে বেয়নেট দিয়ে আহতদের খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়, আর কীভাবে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে ফেলা হয় পাঁচ-ছয়শো মরদেহ।
এই দিনে প্রতিবছর জেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ‘রক্ত গৌরব’ স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানানো হয়। কিন্তু শহীদ পরিবারগুলোর দাবি, ২৮ মার্চকে জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি দিয়ে নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে রংপুরবাসীর এই অনন্য আত্মত্যাগের ইতিহাস।