বাাণিজ্য ডেস্ক:
করোনা মহামারির সময় অক্সিজেন সংকটে বিপর্যস্ত দেশবাসীকে দেখে বগুড়ার প্রকৌশলী মো. মাহমুদুন্নবী বিপ্লব উদ্যোগ নেন কিছু করার। দেশি প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে তিনি এক মাসের মধ্যে তৈরি করেন বহনযোগ্য অক্সিজেন কনসেনট্রেটর। যন্ত্রটি ঘরের বাতাস থেকে প্রতি ঘণ্টায় ৩০০ লিটার পর্যন্ত অক্সিজেন উৎপন্ন করতে সক্ষম। এর খরচ মাত্র ৭০ হাজার টাকা, যা বিদেশি বিকল্পের তুলনায় সাশ্রয়ী।
এই কনসেনট্রেটর, যা তিনি নাম দিয়েছেন ‘কে আর অক্সিজেন কনসেনট্রেটর’, ইতিমধ্যে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এই যন্ত্রটি প্রতি ঘণ্টায় মাত্র তিন টাকার বিদ্যুৎ খরচে ৬০০ লিটার অক্সিজেন উৎপন্ন করতে পারে। সাফল্যের পর মাহমুদুন্নবী আরও উদ্ভাবনী যন্ত্র তৈরিতে মনোযোগ দিয়েছেন।
মাহমুদুন্নবীর উদ্ভাবনী মনোভাব ছোটবেলা থেকেই। ১৯৯৬ সালে বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেওয়ার পর তিনি নিজস্ব উদ্যোগে কাঁকন রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং ওয়ার্কশপ প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে তিনি বন্যা-পূর্ব সতর্কীকরণ যন্ত্রসহ নানা উদ্ভাবন করেন, যা জাতীয় পর্যায়ে প্রশংসিত হয়েছে।
তাঁর তৈরি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ডিসি ভেন্টিলেশন সিস্টেম, বেবি ইউরিন অ্যালার্ম বেড, রোগীর স্যালাইন অ্যালার্ম সিস্টেম এবং অটোমেটিক স্যানিটাইজিং মেশিন উদ্ভাবন হিসেবে উল্লেখযোগ্য। এই উদ্ভাবনগুলো স্থানীয় শিল্প ও প্রযুক্তি খাতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
তাঁর ওয়ার্কশপে তৈরি যন্ত্র দেশের বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং মোবাইল নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলে প্রকৌশল খাতের পরিধি বাড়াতে মাহমুদুন্নবী দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে সাহায্য করেছেন। তাঁর হাত ধরে প্রশিক্ষিত অনেকে এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করছেন।
মাহমুদুন্নবী বলেন, “দেশে প্রকৌশল খাতের উন্নয়ন বাড়াতে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আমার লক্ষ্য, উত্তরাঞ্চলে প্রকৌশলনির্ভর শিল্প গড়ে তোলা এবং স্থানীয় সমস্যার সমাধান করা।” তাঁর কাজ প্রমাণ করে, সংকট কখনো কখনো উদ্ভাবনের পথে নিয়ে যায়।