মানুষের জীবনে জ্ঞান ও বুদ্ধি অমূল্য সম্পদ। সাধারণভাবে আমরা যারা ধনী বা কৌশলী, তাদের সফল এবং বুদ্ধিমান বলে মনে করি। কিন্তু কুরআন ও হাদিসের দৃষ্টিতে সাফল্য এবং বুদ্ধিমত্তার সংজ্ঞা ভিন্ন।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, “প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে এবং নিশ্চয়ই উত্থান দিনে তোমাদের পূর্ণ প্রতিদান দেওয়া হবে।” (সুরা আলে ইমরান : ১৫৮)। এই আয়াত আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, পৃথিবীর জীবন ক্ষণস্থায়ী, আর পরকালের জীবন অনন্ত। তাই আমাদের উচিত দুনিয়ার সুখ-সুবিধার প্রতি আকৃষ্ট না হয়ে আখেরাতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা।
হাদিসে মহানবী (সা.) বলেছেন, “মুমিনদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি, যারা মৃত্যুকে অধিক স্মরণ করে এবং পরকালের জন্য উত্তম প্রস্তুতি নেয়।” (ইবনে মাজাহ : ৩৫৯১)। অর্থাৎ, প্রকৃত বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি, যিনি ইহকালের অস্থায়ী আনন্দের পরিবর্তে পরকালের চিরস্থায়ী জীবনের প্রস্তুতি নেন।
আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন, “তোমরা তো পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দিয়ে থাকো, অথচ আখেরাতের জীবনই উত্তম ও অবিনশ্বর।” (সুরা আলা : ১৬-১৮)। এই আয়াতে আল্লাহ পরকালের জীবনকে ইহকালের জীবনের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং চিরস্থায়ী বলে উল্লেখ করেছেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, “যে ব্যক্তি দুনিয়াকে ভালোবেসেছে সে আখেরাতে কষ্ট পাবে, আর যে ব্যক্তি আখেরাতকে ভালোবেসেছে সে দুনিয়ায় ক্ষতির সম্মুখীন হবে।” (মুসনাদে আহমাদ : ৪/৪১২)।
এখানে রাসুল (সা.) আমাদের পরামর্শ দেন, যে ব্যক্তি পরকালের জন্য জীবন গঠন করবে, সে ইহকালেও পূর্ণ শান্তি এবং সফলতা পাবে।
একইভাবে, হজরত মাহমুদ বিন লাবিদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে, “দুটি জিনিসকে আদম সন্তান অপছন্দ করে। একটি হলো মৃত্যু। অথচ মুমিনের জন্য ফেতনা থেকে মৃত্যুই উত্তম। আর দ্বিতীয়টি হলো ধন স্বল্পতা। অথচ ধন স্বল্পতা হিসাবের জন্য কম।” (মিশকাতুল মাসাবিহ : ৫২৫১)।
এই সবকিছুই ইঙ্গিত করে যে, প্রকৃত বুদ্ধিমান এবং সফল ব্যক্তি সেই, যিনি মৃত্যুকে স্মরণ করে আখেরাতের প্রস্তুতি নেয় এবং নিজের জীবনে এই অস্থায়ী পৃথিবীকে পরকালের চিরস্থায়ী জীবনের চেয়ে কম মূল্য দেন।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে প্রকৃত বুদ্ধিমান এবং সফল হিসেবে কবুল করুন।