রাতের শেষ প্রহর আল্লাহর কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং বরকতময় সময়। এই সময় পৃথিবীজুড়ে সবাই ঘুমিয়ে থাকে, আর পাপের জগতও বন্ধ থাকে। যারা এই সময়ে আল্লাহর ইবাদত করেন, মোনাজাত করেন এবং চোখের পানি ফেলেন, তাদের প্রতি আল্লাহর বিশেষ রহমত বর্ষিত হয়। এই সময়ের ইবাদত শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নয়, বরং দুনিয়াবি কাজের জন্যও অত্যন্ত উপকারী ও বরকতময়।
রাসুলুল্লাহ (সা.) এই সময়ের বরকত সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন। হজরত সখর গামেদি (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, “হে আল্লাহ! আমার উম্মতের জন্য দিনের শুরুভাগ বরকতময় করুন।” (আবু দাউদ : ২৬০৬)। রাসুল (সা.) নিজের বাহিনীকে যুদ্ধ অভিযানে পাঠানোর সময়ও দিনের শুরুতে পাঠাতেন, কারণ তিনি জানতেন যে, ভোরবেলা শুরু হওয়া কাজ অধিক সফলতা অর্জন করে। হজরত সখর (রা.) তার ব্যবসা ভোরবেলা শুরু করতেন, যা তার ব্যবসায় বিপুল উন্নতি ও প্রাচুর্য এনে দিয়েছিল।
ভোরবেলা জেগে ওঠা শুধু ইবাদত ও সফলতার জন্যই নয়, শরীরের জন্যও ভালো। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে জান্নাতবাসীদের পরিচয় দিয়ে বলেন, “তারা শেষ রাতে ক্ষমা প্রার্থনা করে” (সুরা জারিয়াত : ১৮)। অলসতার লক্ষণ হিসেবে ভোরে ঘুমিয়ে থাকা শরীরের ক্ষতির কারণ হতে পারে, তবে আল্লাহর পথে পরিশ্রম করা এবং ভোরে উঠা অনেক ভালো ফল দেয়। হজরত ফাতেমা (রা.)-এর ঘটনা থেকে জানা যায়, রাসুল (সা.) তাকে ভোরে উঠে আল্লাহর রিজিক গ্রহণ করার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিলেন।
ভোরবেলা উঠে কাজ করা বা নামাজ আদায় করা সফলতার অন্যতম সূত্র। যারা ভোরবেলা উঠে কর্মক্ষম হন, তাদের মেধা, বুদ্ধি এবং বিচক্ষণতা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি উন্নত থাকে। প্রিয় নবী (সা.) ভোরবেলা জেগে নামাজ আদায় এবং রিজিকের অন্বেষণ করতে উৎসাহিত করেছেন, যা দুনিয়াবি কাজেও সফলতা এনে দেয়।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “আল্লাহ ওই বান্দার ওপর রহম করুন, যে রাতে উঠে নামাজ আদায় করে এবং তার স্ত্রীকেও জাগায়।” (আবু দাউদ : ১৪৫০)। একইভাবে, স্ত্রীরাও এই অভ্যাস গ্রহণ করে স্বামীকে জাগিয়ে তাদের সঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন।
অতএব, শেষ রাতে ঘুম থেকে উঠে আল্লাহর ইবাদত ও দোয়া করা শুধু ধর্মীয় দায়িত্ব নয়, বরং এটি দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা ও বরকতের পথ।