জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভেঙে দুই ভাগ করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চলমান আন্দোলনের ফলে দেশের আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শনিবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে দেশের শীর্ষ ১৫টি ব্যবসায়ী সংগঠন এই সংকট নিরসনে সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ দাবি করে।
ব্যবসায়ী নেতারা জানান, বৈশ্বিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই দেশের অর্থনীতি চাপে রয়েছে। এর সঙ্গে এনবিআরের অচলাবস্থা যুক্ত হয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় ধাক্কা দিয়েছে। গত ১৪ মে থেকে এনবিআরের বিভিন্ন দপ্তরে কলমবিরতির পর শনিবার থেকে কর্মকর্তারা পূর্ণাঙ্গ শাটডাউনে গেছেন, যা রপ্তানি নির্ভর অর্থনীতির জন্য ভয়াবহ সংকেত বলে মনে করছেন তারা।
প্রতিদিন মাত্র তিন ঘণ্টা কার্যক্রম চালু থাকায় কাঁচামাল খালাস ও ইউজ পারমিট পেতে দীর্ঘ সময় লাগছে, যা আগে একদিনেই সম্পন্ন হতো। বন্দরে পড়ে থাকা পণ্য নষ্ট হচ্ছে, উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটছে, এবং বায়াররা অর্ডার বাতিলের হুমকি দিচ্ছে।
পণ্য চাপে পোর্ট ড্যামারেজও বেড়ে গেছে, নির্ধারিত হারের চেয়ে চারগুণ পর্যন্ত বেশি পরিশোধ করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। জুন-জুলাই মাসে শীতকালীন পণ্যের জন্য উৎপাদনকাল হলেও, কাস্টমস ও বন্ড কমিশনারেটের অচলাবস্থায় সরবরাহ শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, এনবিআর ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে, কারণ এটি বিভ্রান্তি বাড়াবে। তারা এনবিআরের আধুনিকায়নের পক্ষে হলেও চেয়ারম্যান অপসারণকে সঠিক সমাধান মনে করছেন না।
সংকট সমাধানে তারা পাঁচ দফা সুপারিশ দেন—আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে কার্যক্রম সচল রাখা, বিতর্কিত অধ্যাদেশ পুনর্বিবেচনা, হয়রানিমুক্ত ও স্বচ্ছ সেবা নিশ্চিত করা, রেগুলেটরি সংস্থাগুলোর উন্নয়ন নিশ্চিত করা এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহকে সমন্বিতভাবে সংস্কার কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা।
তারা প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সঙ্গে যৌথ আলোচনার আহ্বান জানান এবং আন্দোলনরতদের প্রতিও দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কর্মসূচি প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে দেশের বৃহৎ বাণিজ্য সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দসহ ব্যবসায়ী মহলের শীর্ষ প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।