ভালোবাসার পরীক্ষা একেকজন দেন একেকভাবে। প্রেমিকার মন পেতে কিংবা স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা দীর্ঘস্থায়ী করতে কতরকম পরীক্ষায় দিয়ে থাকেন। জীবনে প্রেমের পরীক্ষা অনেক রকমের হতে পারে, কিন্তু ভালোবাসার প্রমাণ দিতে স্ত্রীকে কাঁধে তুলে দৌড়ানো?
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি! বিশ্বের কয়েকটি দেশে, বিশেষ করে ফিনল্যান্ড, হাঙ্গেরি, এস্তোনিয়া, জার্মানি এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও আয়োজিত হয় এই অদ্ভুত ও মজাদার প্রতিযোগিতা ওয়াফ ক্যারিং কম্পিটিশন। প্রতি বছর শত শত দম্পতি অংশ নেন এই প্রতিযোগিতায়, কেউ হাস্যরসের জন্য, কেউ পুরস্কারের আশায়, কেউ আবার সম্পর্কের বন্ধন আরও মজবুত করতে।
এই খেলা শুধুই শরীরচর্চা নয়, এটি এক ধরনের সামাজিক উৎসব। প্রতিযোগিতার দিন শহরজুড়ে চলে মেলা, খাবারের দোকান, স্থানীয় সংগীত ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। একটা দিনের জন্য সবাই ভুলে যান দৈনন্দিন কাজের ক্লান্তি। হাসি-মজা আর উৎসবে ভরে ওঠে চারপাশ।
এই ব্যতিক্রমী খেলার সূচনা ফিনল্যান্ডে, ১৯৯২ সালে। তবে এর পেছনে রয়েছে শত বছরের পুরনো লোককাহিনি।
১৯শ শতকে ফিনল্যান্ডের রনকাইনেন নামক এক ডাকাত প্রধান ছিলেন, যিনি “স্ত্রী চুরি” করতেন তার দলবল নিয়ে। তার অনুসারীদের মধ্যে ভালো ডাকাত হতে হলে, অন্যের বাড়ি থেকে স্ত্রী চুরি করে কাঁধে তুলে নিয়ে আসতে হতো। অনুশীলনের জন্য তারা বনে কাঁধে ভার তুলে দৌড়ানোর চর্চা করত। এই কিংবদন্তিকেই রূপক অর্থে তুলে ধরেই আয়োজন করা হয় এই ব্যতিক্রমী খেলার স্মৃতি থেকে খেলায় রূপান্তর!
তবে এটি এখন কেবলই একটি খেলা এবং প্রতিযোগিতা। যেখানে বিশ্বাস, ভারসাম্য এবং ভালোবাসার অনন্য এক প্রকাশভঙ্গি। এই প্রতিযোগিতার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ভালোবাসা ও সঙ্গীর প্রতি বিশ্বাস প্রকাশ। দম্পতির মধ্যে সহযোগিতা ও বন্ধন শক্তিশালী করা। সামাজিক বিনোদন ও ঐতিহ্য ধরে রাখা।
এই প্রতিযোগিতায় স্ত্রীকে কাঁধে নিতে হয় উল্টো করে। এক্ষেত্রে এস্তোনিয়ান ক্যারি হচ্ছে সবচেয়ে জনপ্রিয় ধরন। এতে স্ত্রীকে উল্টো করে, মাথা নিচে ও পা ঘাড়ে পেঁচিয়ে বহন করা হয়। দৈর্ঘ্য প্রায় ২৫৩.৫ মিটার, যার মাঝে অন্তত একটি পানির বাধা এবং দুটি শুকনা বাধা থাকে।
প্রতি বছর জুলাই মাসেই এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এই প্রতিযোগিতার কিন্তু কিছু নিয়মাবলী রয়েছে। যেমন-পুরুষ অংশগ্রহণকারী তার নারী সঙ্গীকে কাঁধে তুলে একটি নির্দিষ্ট পথে দৌড়াবেন। সঙ্গী হতে হবে বৈধ স্ত্রী, তার বয়স ১৭ বা তদূর্ধ্ব হতে হবে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আয়োজকরা বন্ধু কিংবা প্রেমিকাকেও এই খেলায় অনুমতি দেয়। স্ত্রী ওজন হবে নূন্যতম ৪৯ কেজি। যদি ওজন কম হয় তাহলে বাকি ওজনের একটি ব্যাগ বেঁধে দেওয়া হবে স্বামীর শরীরে।
পুরো পথজুড়ে থাকে পানির খাল, বালু, কাঠের বাধাসহ নানা প্রতিবন্ধকতা। অংশগ্রহণকারী দম্পতি যিনি সবচেয়ে কম সময়ে ফিনিশ লাইন পার করবেন, তিনিই বিজয়ী। এই প্রতিযোগিতার সবচেয়ে মজার অংশ হলো পুরস্কার। বিজয়ী পুরুষকে তার স্ত্রীর ওজন অনুযায়ী বিয়ার বা পানীয় উপহার হিসেবে দেওয়া হয়! উদাহরণস্বরূপ, যদি স্ত্রী ৪০ কেজি হন, তবে বিজয়ী পাবেন ৪০ কেজি ওজনের সমপরিমাণ বিয়ার।