মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) দেশটির সীমান্তবর্তী মংডু শহরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করেছে। কয়েক মাসের তীব্র লড়াইয়ের পর রোববার শহরটি দখল করে তারা। মংডুর দখল নেওয়ার ফলে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের প্রায় ২৭০ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা এখন পুরোপুরি আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
মিয়ানমারের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ইরাবতীর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মংডু শহরের বাইরে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি কয়েক মাস ধরে লড়াইয়ের পর দখল করেছে আরাকান আর্মি। বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি জানায়, ঘাঁটি দখলের সময় জান্তা সরকারের সৈন্য এবং তাদের সমর্থিত রোহিঙ্গা মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো পালিয়ে যায়।
এ যুদ্ধে আরাকান আর্মি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ৮০ জনের বেশি সদস্যকে আটক করেছে বলে জানিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সামরিক অপারেশন কমান্ড ১৫-এর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থুরেইন তুন। একইসঙ্গে রোহিঙ্গা মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি হামলা চালানোর কথাও জানায়।
মংডু শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার মাধ্যমে আরাকান আর্মি রাখাইনের মংডু ও বুথিডাং এবং চিন প্রদেশের পালেতোয়া শহরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের দাবি করছে। এই তিন শহর বাংলাদেশের সীমান্তের কাছে অবস্থিত। এছাড়া পালেতোয়া শহর ভারতের সীমান্তের সাথেও যুক্ত।
রাখাইন অঞ্চলের মানবিক পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, এই অঞ্চলের প্রায় ২০ লাখ মানুষ বর্তমানে দুর্ভিক্ষের মুখে রয়েছে। জান্তা বাহিনীর অবরোধের কারণে সেখানে খাদ্য, জ্বালানি, এবং ওষুধসহ মানবিক সাহায্য পৌঁছাতে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, রাখাইন প্রদেশের এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। তারা মনে করেন, বাংলাদেশ সরকার যদি রাখাইনের সমস্যাগুলোর সমাধান চায়, তাহলে আরাকান আর্মির সঙ্গে কার্যকর সংলাপে যুক্ত হওয়া প্রয়োজন।
এদিকে আরাকান আর্মি দক্ষিণ রাখাইনের গয়া, তাউনগুপ এবং আন শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য নতুন করে লড়াই শুরু করেছে বলে জানায় ইরাবতী। বিদ্রোহী গোষ্ঠীটির এই অগ্রগতি মিয়ানমারের রাজনৈতিক এবং মানবিক সংকটকে আরও গভীর করে তুলেছে।