রবিবার
২০শে এপ্রিল, ২০২৫
৭ই বৈশাখ, ১৪৩২

আমরা জনতার পক্ষে সত্য বলি

শতাব্দীর ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃত হাজারের বেশি, বেঁচে থাকা মানুষ ঘরছাড়া

Fresh News রিপোর্ট
এপ্রিল ৫, ২০২৫
৩:২২ অপরাহ্ণ

ধসে পড়া ভবন, গর্তে ভাঙা সড়ক আর মৃত্যুর আতঙ্ক পেরিয়ে নিজের শহর সাগাইংয়ের দিকে ফিরছিলেন কো জেয়ার। গত ২৮ মার্চ মিয়ানমারে সংঘটিত ৭ দশমিক ৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল মধ্যাঞ্চলীয় এই শহরেই।

সাধারণত সেতু পার হতে যেখানে সময় লাগে ৪৫ মিনিট, ভূমিকম্পের পর তা পেরোতেই কো জেয়ারের সময় লেগে যায় ২৪ ঘণ্টা। সাগাইংয়ে পৌঁছে তিনি দেখেন, তার পরিবার বেঁচে গেলেও বন্ধু-স্বজনদের অনেকেই মারা গেছেন। মৃতদেহের গন্ধে ভারী হয়ে উঠেছে পুরো শহরের বাতাস।

সরকারি হিসাবে, সাগাইং, মান্দালয় ও ইয়াঙ্গুনসহ কয়েকটি শহরে এই ভূমিকম্পে ৩ হাজার ৩৫৪ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। উদ্ধারকর্মীদের মতে, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো চাপা পড়ে আছে বহু মরদেহ। এই ভূমিকম্পকে গত এক শতকের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী বলছেন ভূতাত্ত্বিকরা।

ভয়াবহ আফটারশকের আতঙ্কে কেউ ঘরে ফিরছেন না। বাসিন্দারা খোলা জায়গায় অবস্থান করছেন দিনরাত। কো জেয়ার বলেন, “ভবনগুলোতে ফিরতে সাহস পাচ্ছে না কেউই। আমরাও রাস্তায় থাকছি।” খাবার, বিশুদ্ধ পানি, প্রচণ্ড গরম এবং মশার উপদ্রবে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জীবন।

চার বছর ধরে সামরিক শাসন ও গৃহযুদ্ধ-জর্জরিত মিয়ানমারের জন্য এই দুর্যোগ যেন বাড়তি বিপর্যয়। সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানের পর দেশের বেশিরভাগ এলাকা বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। জাতিসংঘ জানিয়েছিল, ভূমিকম্পের আগেই সেখানে দুই কোটির মতো মানুষের মানবিক সহায়তা প্রয়োজন ছিল।

উদ্ধার তৎপরতায় সেনাবাহিনীর অনুপস্থিতি নিয়েও চলছে সমালোচনা। নাগরিক সরকারপন্থী জোট ‘ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট’ ও সাধারণ জনগণ নিরলসভাবে কাজ করছে দুর্গত এলাকায়। নাগের নেতা কিয়াও মিন বলেন, “আমাদের হাতে নেই ভারী যন্ত্র বা প্রশিক্ষিত জনবল, তবুও আমরা জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করছি।”

জাতিসংঘের সাবেক দূত ইয়াংহি লি সেনা সরকারকে দায়ী করে বলেন, “এত বড় বিপর্যয়ের পরেও সেনাবাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা অমানবিক। কেন তারা সাহায্যে এগিয়ে আসছে না?”

এই দুর্যোগে নিঃস্ব মানুষগুলো শুধু জীবন নয়, হারিয়েছে স্বজন, নিরাপত্তা, ও ভবিষ্যতের আশাও। সাহায্য না পৌঁছালে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে বলে আশঙ্কা করছেন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো।