শনিবার
১৯শে এপ্রিল, ২০২৫
৬ই বৈশাখ, ১৪৩২

আমরা জনতার পক্ষে সত্য বলি

চট্টগ্রামের নালা এখন মৃত্যুকূপ, বারবার প্রাণহানি সত্ত্বেও নেই স্থায়ী নিরাপত্তা

Fresh News রিপোর্ট
এপ্রিল ১৯, ২০২৫
৬:৩৩ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম নগরীর খোলা খাল ও নালাগুলো শুধু জলাবদ্ধতার নয়, হয়ে উঠেছে মৃত্যুকূপ। প্রতিবছরই এসব গহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছে কারও না কারও জীবন। শিশুসহ পথচারীরা পানির স্রোতে নিখোঁজ হয়ে পড়ছেন এসব উন্মুক্ত নালায়। অথচ বছরের পর বছর পার হলেও স্থায়ী নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি।

নগরের খাল ও নালার রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তার দায়িত্ব চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ও সংস্কারের কাজ করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। কিন্তু বাস্তবে দুই সংস্থার মধ্যেই রয়েছে চরম সমন্বয়হীনতা এবং দায় এড়ানোর প্রবণতা। ফলে বর্ষা মৌসুম এলেই ফেরে আতঙ্ক।

নগরের বিভিন্ন এলাকায় নেই ব্যারিকেড, সাইনবোর্ড কিংবা আলো। সন্ধ্যার পর থেকে এসব এলাকা অন্ধকারে ডুবে যায়। খাল খননের চলমান প্রকল্পগুলোতেও জনগণের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে না। খোলা নালার পাশেই পথচলা যেন জীবন নিয়ে জুয়া খেলার সমান।

সাম্প্রতিক ঘটনায় কাপাসগোলায় উন্মুক্ত নালায় পড়ে ছয় মাসের শিশু চেহরিস মারা যায়। তার মা ও দাদি বেঁচে গেলেও শিশুটির নিথর দেহ পাওয়া যায় চাক্তাই খালে। এর আগেও একাধিক ঘটনায় শিশু, শিক্ষার্থী, বৃদ্ধ প্রাণ হারিয়েছেন। ২০২১ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত প্রায় প্রতি বছরই এমন মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছে।

প্রকল্পের ধীরগতি ও অর্থ সংকটের কারণ দেখিয়ে সিডিএ জানায়, ৩৬টি খালের মধ্যে ২৩টিতে নিরাপত্তা বেষ্টনী দেওয়া হয়েছে। বাকি কাজ এখনও অসম্পূর্ণ। চসিকের পক্ষ থেকে অবশ্য কোনো সুস্পষ্ট অবস্থান বা জবাব মেলেনি। নাগরিকরা বলছেন, উন্নয়ন চাই— তবে তা যেন জীবননাশী না হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, খাল ও নালার নিরাপত্তায় সাময়িক ব্যবস্থা না নিয়ে প্রকল্পের অজুহাতে মানুষের জীবন ঝুঁকিতে রাখা অব্যাহত ব্যর্থতা। দুর্ঘটনার পর প্রস্তাব বা আলোচনা হলেও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয় না বলেই প্রাণ হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ।

চট্টগ্রামের নাগরিকরা এখন একটাই দাবি করছেন— দ্রুত কার্যকর সমন্বিত উদ্যোগ, উন্মুক্ত খাল-নালাগুলোর নিরাপত্তা এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর দায়বদ্ধতা নিশ্চিত হোক। কারণ কোনো শিশুর জীবন এভাবে আর থেমে যাক, সেটা কেউ চায় না।