গত কয়েক মাসে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতি ঘটছিল, যা এই সপ্তাহে আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে—বাংলাদেশের সম্মিলিত সনাতন জাগরণী মঞ্চের মুখপাত্র এবং সনাতন ধর্মীয় নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারের পর।
ভারতের মিত্র হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত আগস্ট মাসে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যান এবং তখন থেকে ভারতে অবস্থান করছেন। এই পরিস্থিতি ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের সম্পর্কের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহম্মদ ইউনূসের অবস্থান থেকে।
ড. ইউনূস সম্প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, শেখ হাসিনা ভারতে বসে ফের ক্ষমতায় আসার ষড়যন্ত্র করছেন, এবং ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলো বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের নির্যাতন ইস্যু নিয়ে অতিরঞ্জিত সংবাদ প্রকাশ করছে। তবে, দুই দেশের মধ্যে বিরোধের মূল কেন্দ্রবিন্দু হয়েছে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তার, যিনি চট্টগ্রামের পুণ্ডীরক ধামের অধ্যক্ষ এবং ইসকনের সাবেক সদস্য।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় এবং আদালতে তোলার পর উত্তেজিত জনতার হাতে আইনজীবী সাইফুল ইসলামের হত্যাকাণ্ড ঘটে। এই হত্যাকাণ্ডের পর সনাতন ধর্মাবলম্বী এলাকায় ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন প্রত্যাখ্যান এবং আইনজীবী হত্যার ঘটনায় স্থানীয় মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে নিন্দা জানায়।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপি, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তি না হলে বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তে বাণিজ্য বন্ধের হুমকি দিয়েছে। এর পাশাপাশি, ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে পুলিশি রাষ্ট্রের গঠন এবং হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনা উল্লেখ করা হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, শেখ হাসিনার শাসনামলে ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত শক্তিশালী ছিল, তবে এখনকার পরিস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে গেছে। ড. ইউনূস ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন যে, বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য ভারত একটি ভুলভাবে সাজানো প্রচারণা চালাচ্ছে।
এই পরিস্থিতি ভারতের নীতি ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক জটিলতা নিয়ে নতুন মাত্রা যোগ করেছে, যেখানে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে উঠেছে।