রাজধানীর পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ৯ জুলাই বুধবার বিকেলে প্রকাশ্য দিবালোকে নির্মমভাবে খুন হন ভাঙারী ব্যবসায়ী লালচাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯)।
হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয় দিনের আলোয়, হাসপাতালের মূল ফটকের কাছে। হামলাকারীরা কুপিয়ে, পিটিয়ে এবং মাথায় পাথর মেরে সোহাগকে হত্যা করে। এরপর তার নিথর দেহটি রাস্তার মাঝখানে এনে ফেলে, যেখানে মৃতদেহের ওপর চালানো হয় উল্লাস ও পাশবিকতা – যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যায়।
ঘটনাস্থলের অদূরে ছিল হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও আনসার ক্যাম্প। কিন্তু নৃশংসতা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে কেউ সাহস করে এগিয়ে আসেনি। পরে মৃতদেহ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা জানান, ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ে কীভাবে হামলাকারীরা মৃতদেহের ওপর চরম উন্মত্ততা চালায়। অনেকে মোবাইলে কথা বলার ফাঁকে ঘুষি মারছে, কেউ দৌড়ে এসে তার বুকে লাফ দিচ্ছে, কিল-ঘুষির পরও থামেনি তাদের নৃশংসতা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সোহাগ ‘সোহানা মেটাল’ নামে একটি ভাঙারী দোকানের মালিক ছিলেন। তার ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণ নিতে চাঁদা দাবি করছিল মাহমুদুল হাসান মহিন ও সারোয়ার হোসেন টিটু। ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব থেকেই পরিকল্পিতভাবে সোহাগকে ডেকে এনে হত্যা করা হয়।
নিহতের বোন মঞ্জু আরা বেগম বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এজাহারে মোট ২০ জনের নামসহ আরও ১৫–২০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজের ভিত্তিতে সবাইকে শনাক্ত করা হয়েছে এবং মূলহোতা মহিন ও তারেক রহমান রবিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রবিনের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তলও উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব-১০ এর অভিযানেও আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কেরাণীগঞ্জের ইবনে সিনা হাসপাতাল এলাকা থেকে। যদিও তাদের নাম প্রকাশ করেনি র্যাব, তবে তারা হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি বলে নিশ্চিত করা হয়।
ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে অনেকেই রাজধানীর ৩০ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। যদিও দলীয় পদ ছিল কি না, তা নিশ্চিত নয়। তবে এজাহারভুক্ত দুই নেতাকে কেন্দ্রীয় যুবদল আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে।
যদিও বিএনপি তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো এ ঘটনার জন্য বিএনপিকে দায়ী করে কড়া সমালোচনা করেছে। বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নেতারা একে ‘পৈশাচিক’ ও ‘জাহেলিয়াতের দৃষ্টান্ত’ হিসেবে অভিহিত করেন।
বিএনপি পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা কোনো অপরাধীকে প্রশ্রয় দেয় না এবং ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করে। দলীয়ভাবে এ ঘটনার জন্য কাউকে আড়াল করা হবে না বলে তারা জানায়।
দেশজুড়ে এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও রাজপথ। সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী এবং সামাজিক সংগঠনগুলোর সদস্যরা নেমে আসে রাস্তায়। সবাই দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায়।
মানুষ প্রশ্ন তুলছে – প্রকাশ্য দিবালোকে এত ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলেও, কেন কেউ সাহস করে কিছু করল না? এই প্রশ্নই এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে দেশের প্রতিটি প্রান্তে।