মঙ্গলবার
৫ই আগস্ট, ২০২৫
২১শে শ্রাবণ, ১৪৩২

আমরা জনতার পক্ষে সত্য বলি

৫ আগস্ট: একটি গণঅভ্যুত্থানে বদলে গেল ইতিহাস

Fresh News রিপোর্ট
আগস্ট ৫, ২০২৫
৮:২৬ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট এক অবিস্মরণীয় দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে, যেদিন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দীর্ঘ ১৬ বছরের আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে নজিরবিহীন গণআন্দোলনের মাধ্যমে।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে সূচিত এক শান্তিপূর্ণ ছাত্র আন্দোলন দ্রুত রূপ নেয় জনগণের ব্যাপক ক্ষোভের বিস্ফোরণে। উচ্চ আদালতের রায়ে কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহালের সিদ্ধান্তের পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। এই আন্দোলন প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক হলেও পরে তা ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে।

শুরুতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির জবাবে সরকার আন্দোলন দমন করতে পুলিশ, র‌্যাব ও ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে। এই দমন-পীড়নের মধ্যেই আন্দোলন এক দফা—প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগে—রূপ নেয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, কর না দেওয়া, অফিসে অনুপস্থিতি এবং প্রবাসীদের রেমিট্যান্স বন্ধ রাখার মাধ্যমে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। এতে অর্থনীতি ও প্রশাসন কার্যত অচল হয়ে পড়ে।

সরকারবিরোধী গণরোষের পেছনে দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, গণতন্ত্র সংকোচন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহিংস ভূমিকার দীর্ঘস্থায়ী অসন্তোষ বড় ভূমিকা রাখে। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়লে সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয়। তথ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করা হলেও, পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

৫ আগস্ট ঢাকার রাজপথে লাখো মানুষ অংশ নেয় ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবন ঘেরাওয়ের মুখে শেখ হাসিনা দুপুরে পদত্যাগ করেন এবং ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে দেশত্যাগ করেন। সেনাবাহিনী নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানায় এবং অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়।

এই ঐতিহাসিক ঘটনার পর সারা দেশে বিজয়োল্লাসে ফেটে পড়ে জনতা। সরকারের দুর্নীতি ও সহিংসতার বিরুদ্ধে বহু মামলা দায়ের হয়। কেউ কেউ গ্রেপ্তার হন, আবার কেউ দেশত্যাগ করেন।

আন্তর্জাতিক মহল এই পরিবর্তনকে সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করে এবং গণতন্ত্রের প্রতি সমর্থন জানায়। অনেকের মতে, ৫ আগস্ট ছিল শুধু একটি সরকারের পতন নয়, বরং বাংলাদেশের জনগণের দীর্ঘদিনের চাপা ক্ষোভের একটি ঐতিহাসিক বিস্ফোরণ। এটি প্রমাণ করেছে, ঐক্যবদ্ধ জনগণের শক্তি যেকোনো স্বৈরশাসনকেই চ্যালেঞ্জ জানাতে সক্ষম এবং একটি নতুন গণতান্ত্রিক অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।