মাত্র ৯ বছর বয়সেই দাবার বোর্ডে চমক দেখাচ্ছে রায়ান রশীদ মুগ্ধ। ঢাকার সাউথ পয়েন্ট স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির এই শিক্ষার্থীকে গ্র্যান্ডমাস্টার বানানোর লক্ষ্যে নিজ বাসাকেই দাবার ক্লাব ও প্রতিযোগিতার ভেন্যুতে রূপান্তর করেছেন তার বাবা মাহবুবুর রশীদ।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে গঠিত পন পাওয়ার চেস ক্লাবের চর্চাকেন্দ্র এখন মুগ্ধদের নিজস্ব বাসা। নারায়ণগঞ্জের রুপায়ন টাওয়ার আবাসিক এলাকায় অবস্থিত এই বাসায় একটি কক্ষকে করা হয়েছে দাবা অনুশীলন ও প্রতিযোগিতার জন্য উপযোগী। সেখানে পাঁচটি টেবিলে দশজন খেলোয়াড় একসঙ্গে খেলার সুযোগ পাচ্ছেন।
মুগ্ধর বাবা মাহবুব বলেন, ছেলের দাবার প্রতি ভালোবাসা ও প্রতিভা দেখে তিনি এটিকে শুধু নিজের সন্তানের জন্য নয়, বরং দেশের অন্য উঠতি দাবাড়ুদের জন্যও একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছেন। দাবা খেলার খরচ ও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের সুযোগ সীমিত থাকায় তিনি এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন।
শুধু একটি কক্ষ নয়, মাহবুব পাশের ফ্ল্যাটও ভাড়া নিয়েছেন আবাসিক প্রশিক্ষণের জন্য, যেখানে দেশি-বিদেশি দাবাড়ুরা থেকে প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন এবং টুর্নামেন্ট খেলতে পারবেন। আন্তর্জাতিক কোচ ফিদে মাস্টার নাইম হক মুগ্ধকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন এবং তার দৃঢ় মনোযোগ, প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা অনুশীলনের উৎসাহে মুগ্ধ হয়েছেন তিনি।
ক্লাবটির সভাপতি আন্তর্জাতিক মাস্টার আবু সুফিয়ান শাকিল জানান, এখানে ছোট আয়োজনে হলেও পেশাদার পরিবেশে ১০ জনের প্রতিযোগিতা হবে এবং ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক মানের টুর্নামেন্টেরও পরিকল্পনা রয়েছে। বিদেশি খেলোয়াড়দের আকৃষ্ট করতে ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কার দাবাড়ুদের নিয়ে ভাবা হচ্ছে।
তবে বাড়িতে আয়োজিত টুর্নামেন্ট নিয়ে নিরপেক্ষতা নিয়ে কিছু প্রশ্ন থাকলেও শাকিল জানান, সব প্রতিযোগিতা লাইভ সম্প্রচার করা হবে এবং আন্তর্জাতিক মানের রেফারির তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হবে।
মুগ্ধ নিজেও আত্মবিশ্বাসী। সে জানায়, বাবার সহায়তা ও এই পরিবেশ তাকে গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার পথে আরও অনুপ্রাণিত করে। তার বাবা মনে করেন, আগামী তিন-চার বছরই গুরুত্বপূর্ণ। সেই সময়ের মধ্যেই মুগ্ধকে গ্র্যান্ডমাস্টার পর্যায়ে পৌঁছানোর সর্বোচ্চ সুযোগ দেওয়াই এখন তাদের প্রধান লক্ষ্য।
নারায়ণগঞ্জে নব্বইয়ের দশকেও দাবার কিছু আয়োজন হয়েছিল, তবে মুগ্ধর পরিবার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা এক নতুন দৃষ্টান্ত হয়ে উঠছে – যেখানে একটি বাসা শুধু ছেলের নয়, দেশের ভবিষ্যৎ দাবাড়ুদের প্রস্তুতির মঞ্চ হয়ে উঠেছে।